সেলিনা আক্তার:
প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ৮৯৪ কোটি ডলার দেশে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২০৬ কোটি ডলার বা ২৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। গত অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২৩৯ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এভাবে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮২ কোটি ডলার। এই হিসাবে প্রথম তিন মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৫৫ কোটি ডলার বা ৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। গত অর্থবছর রপ্তানি আয় ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৮১ কোটি ডলারে নেমেছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাড়ার ফলে ডলার বাজারে অস্বস্তি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ডলারের দর ১২০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। এর আগে যেখানে প্রতি ডলার ১২৫ টাকা পর্যন্ত কিনতে হচ্ছিল। অবশ্য অতি সম্প্রতি খোলাবাজারে ডলারের দর কিছুটা বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বরে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) জুলাই-আগস্টের দায় বাবদ ১৩৭ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। তা বাড়তে বাড়তে অক্টোবর শেষে ১৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা সমকালকে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ বাড়ছে। ডলারের দরও স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থনীতির জন্য যা স্বস্তির খবর।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়। এর আগে সরকারকে অসহযোগিতার জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠাতে ব্যাপক ক্যাম্পেইন চলছিল। আবার আন্দোলন দমনের জন্য তখন বেশ কয়েকদিন ব্যাংকসহ সব ধরনের অফিস বন্ধ রাখা হয়। এসব কারণে জুলাইতে রেমিট্যান্স কমে ১৯১ কোটি ডলারে নেমে যায়। তার আগে রেমিট্যান্স বাড়ছিল।
আইএমএফের পরামর্শে গত মে মাসে ডলারের দর নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করে সরকার। তখন এক লাফে প্রতি ডলারে ৭ টাকা বাড়িয়ে মধ্যবর্তী দর ঠিক করা হয় ১১৭ টাকা। এর পর রেমিট্যান্স দ্রুত বাড়তে শুরু করে। গত মে মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসে ২২৫ কোটি ডলার। জুনে আরও বেড়ে ২৫৪ কোটি ডলার এসেছিল। ক্রলিং পেগ চালুর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মধ্যবর্তী দরের সঙ্গে ১ টাকা যোগ করে আমদানিকারকদের কাছে সর্বোচ্চ ১১৮ টাকায় বিক্রির কথা বলেছিল। ওই সময় ১২২ থেকে ১২৩ টাকা দরে রেমিট্যান্স কিনছিল ব্যাংকগুলো। আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করছিল ১২৫ টাকা পর্যন্ত দরে। যদিও ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দরই দেখাচ্ছিল। তবে ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর মধ্যবর্তী দরের সঙ্গে আড়াই শতাংশ তথা ১২০ টাকায় বিক্রির সুযোগ দিয়েছে। এর পর থেকে দর স্থিতিশীল রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ঋণের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ বের করে গত কয়েক বছরে বিদেশে পাচার হয়েছে। পাচার ঠেকানোর উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করে বাজার ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়। ফলে রিজার্ভ অনেক কমেছে। নতুন সরকার আর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে না। বরং বাজার থেকে ডলার কিনে আগের দায় পরিশোধ করছে। যে কারণে আগের মতো অস্বস্তি নেই।