চোখে গুলি নিয়ে ১২ দিন ছিলেন জেলে

প্রকাশিত: ১:২২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪

নরসিংদী প্রতিনিধি:

নরসিংদীর ভেলানগর এলাকায় ১৮ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে চোখে গুলিবিদ্ধ হয় কলেজ শিক্ষার্থী আশরাফুল। পরদিন অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হলে সেদিনই তার চোখে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। দুটি গুলি বের করা গেলেও অনেক ভেতরে চলে যাওয়ায় বাকি দুটি বের করা যায়নি। এর পর ২১ জুলাই বাড়ি ফিরলে পরদিন তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এক দিন থানায় রাখার পর জেলা কারাগারে হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ সময় তাকে চোখের ওষুধও সঙ্গে নিতে দেওয়া হয়নি। ১২ দিন জেল খাটার পর এইচএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় ৩ আগস্ট তাকে জামিন দেওয়া হয়। পরে আরেক দফা অস্ত্রোপচার করেও তার বাঁ চোখে আলো ফেরেনি।
আশরাফুল ইসলাম নরসিংদীর পলাশ উপজেলার পলাশ বাজার এলাকার দিনমজুর সাব্বির হোসেনের বড় ছেলে। সে নরসিংদী সরকারি কলেজের এইচএসসির পরীক্ষার্থী।
সরেজমিন আশরাফুলের বাড়িতে গেলে সে জানায়, ১৮ জুলাই বিকেলে নরসিংদীর ভেলানগর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলের যোগ দেয় সে। কিছুদূর যাওয়ার পরই এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ সময় গুলি লেগে নরসিংদীর এনকেএম হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিদ ভূঁইয়া তার পাশে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাকে উদ্ধার করতে গেলে আশরাফুলের বাঁ চোখে চারটি ছররা গুলি লাগে। পরে তাকে উদ্বার করে নরসিংদী ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেদিনই তার চোখ অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। এর পর ২১ জুলাই তাকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়।
শিক্ষার্থী আশরাফুল বলেন, ঢাকা থেকে আসার পরদিন ২২ জুলাই প্রায় ২০-২৫ জন পুলিশ বাড়িতে এসে আমাকে মারধর করে ধরে নিয়ে যায়। এক দিন থানায় রাখার পর নরসিংদী কারাগারে হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় আমাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জেলে থাকা অবস্থায় আরও একটি মামলা দেওয়া হয়। পুলিশের কাছে আকুতি-মিনতি করলেও চোখের ওষুধ ও কাগজপত্র সঙ্গে নিতে
দেওয়া হয়নি। ১৯ জুলাই কারাগারে হামলার দিন আমি ঢাকায় হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করিয়েছি বলার পরও পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়।
১২ দিন কারাভোগের পর এইচএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় ছাত্র-জনতার দাবির মুখে ৩ আগস্ট আশরাফুলকে জামিন দেওয়া হয়। পরে ১৮ আগস্ট আবার তাকে ঢাকার ইসলামী চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন আবারও তার চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চোখ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে অস্ত্রোপচারের ফলে চোখ শুকিয়ে যাবে না।
আশরাফুল বলেন, আমার বাঁ চোখের ভেতরে এখনও দুটি গুলি আটকে আছে। এই চোখে কিছুই দেখতে পাই না।
আশরাফুলের বাবা সাব্বির হোসেন বলেন, ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা পাশে থেকে আর্থিকসহ সব ধরনের সহায়তা করেছে। ছেলেকে নিয়ে আমি গর্বিত। তবে ছেলের চোখের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ বহন করতে গিয়ে খুব বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে।