সাইফুল ইসলাম:
রাজধানীর পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জের আরশিনগরের একটি ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়া থাকতেন প্রকৌশলী সদরুল আলম (৪০)। একাই থাকতেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে একদিন রাতে ভেন্টিলেটর ভেঙে চার তলায় সদরুলের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন এক ব্যক্তি। এসময় শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তার। তিনি ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার দিয়ে আল আমিন নামের ওই ব্যক্তিকে ধরতে যান। তখন আল আমিন তার পকেট থেকে সুইচ গিয়ার চাকু বের করে সদরুলকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যান। ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে আল আমিনও রয়েছেন। আর বাকি দুজন হলেন মো. শুভ ও রিমন হোসেন। আজ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, গত ১২ আগস্ট রাতে অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পরেন সদরুল। পরদিন সকালে বাড়ির মালিক মো. ইউনুস মিয়া একটি মানিব্যাগ পান। মানিব্যাগের ভেতরে সদরুল আলমের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসার জন্য তার রুমের সামনে গিয়ে দরজা খোলার জন্য ডাকাডাকি করতে থাকেন ইউনুস মিয়া। রুমের ভেতর থেকে সাড়া না আসায় তিনি ৯৯৯ কল করেন। কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সদরুলের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন মোসা. রেবেকা সুলতানা রতœা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন।
ঘটনার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, শুভ ভ্যান চালিয়ে মোহাম্মদপুর থেকে তিনজনকে নিয়ে কেরানীগঞ্জ থানাধীন আরশিনগরে যান। তারা চুরি করার জন্য পাশাপাশি ভবন, সিকিউরিটি গার্ড নেই এমন বাড়ি খুঁজতে থাকেন। এসময় তাদের চোখে ইউনুস মিয়ার ভবনকে সুবিধাজনক বলে মনে হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভ্যান নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন রিমন। আর শুভ ও আল আমিন বাসায় ঢুকার জন্য যান। এরপর আল আমিন ভেন্টিলেটর ভেঙে চার তলায় সদরুল আলমের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেলে ‘চোর চোর’ বলে আল আমিনকে ধরতে যান সদরুল। তখন আল আমিন তাকে সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যান।
আসাদুজ্জামান জানান, আল আমিনকে আরশিনগর থেকে সুইচ গিয়ার চাকুসহ গ্রেফতার করা হয়। তিনি একজন পেশাদার চোর। প্রতিদিন রাতে তার বন্ধু শুভ ও রিমনসহ একটি ভ্যানে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ভেন্টিলেটর দিয়ে বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন অফিসে ঢুকে নগদ টাকা, মোবাইলসহ অন্যান্য মালামাল চুরি করেন। তাদের মধ্যে শুভ ও রিমন প্রায় ১০ বছর ধরে ভেন্টিলেটর ভেঙে চুরি করে আসছেন। আল আমিনকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে শুভকে মোহাম্মদপুরের লাউতলা এলাকা থেকে ভ্যানসহ গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় রিমনকে। আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদে রিমন ও শুভ চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন।