ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত, প্রতিবাদ করায় হাত ভাঙল কিশোর গ্যাং সদস্যরা

প্রকাশিত: ৬:১৮ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,নোয়াখালীঃ 

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মাদরাসার শ্রেণিকক্ষে ঢুকে এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে বহিরাগত দুই বখাটে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করায় ওই মাদরাসার এক শিক্ষককে মারধর ও অফিস সহকারীর দুই হাত লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।গত রোববার (৫ মে) বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের মদিনা বাজারের পূর্ব পাশে এবং দুপুরের দিকে মুছাপুর জামেয়া শরাফতিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী আহত শিক্ষক হলেন নুরানি বিভাগের মো. সোহেল (২৬) ও ভুক্তভোগী অফিস সহকারী মো. হাসান (৩৪)। গতকাল সোমবার রাতে জেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মো. হাসানের এক হাতে অস্ত্রোপচার এবং অপর হাতে প্লাস্টার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাজু (২৪) ও আবু নোমান (২৫)।

জামেয়া শরাফতিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আরবি প্রভাষক মো. শহীদ উল্যাহ বলেন, রোববার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় বখাটে রাজু মাদরাসার এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতে শ্রেণিকক্ষে ঢোকে। এ সময় ওই ছাত্রী ভয়ে বেঞ্চের নিচে লুকিয়ে যায়। খবর পেয়ে মাদরাসার নুরানি বিভাগের শিক্ষক মো. সোহেল এগিয়ে গেলে রাজু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। পরে অফিস সহকারী হাসান বখাটেদের মাদরাসা অধ্যক্ষের কাছে নিয়ে যান। এরপর সেখানে স্থানীয় ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।মো. শহীদ উল্যাহ আরও বলেন, এর জেরে বিকেল ৫টার দিকে মাদরাসা থেকে মো. হাসান বাড়ি ফেরার পথে রাজু ও নোমানের নেতৃত্বে ৭ থেকে ৮ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য রাস্তায় তার গতিরোধ করে। এরপর পিটিয়ে তার দুই হাত ভেঙে দেয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অফিস সহকারী মো. হাসান জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য দুই বখাটে মো. রাজু ও আবু নোমান মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে উত্ত্যক্ত করছিল। তখন নুরানি বিভাগের শিক্ষক মো. সোহেল বিষয়টি দেখে তাদের ধরে অধ্যক্ষের কাছে সোপর্দ করতে চাইলে তারা তার (সোহেল) ওপর হামলা চালায়। তখন তিনি এগিয়ে গিয়ে ওই দুই কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক করে অধ্যক্ষের কাছে নিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও দুই কিশোর গ্যাং সদস্যের অভিভাবকদের ডেকে আনা হয়। এরপর দুই কিশোর গ্যাং সদস্যের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

অফিস সহকারী হাসান আরও জানান, মীমাংসা হওয়ার পর সবাই যার যার মতো বাড়ি চলে যান। এরপর বিকেল ৫টার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে মুছাপুর বাংলাবাজারে আসার পথে মদিনা বাজারের পূর্ব পাশে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে তার ওপর হামলা চালায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্য মো. রাজু , আবু নোমানসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। হামলাকারীরা তখন কাঠ ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাকে মারাত্মকভাবে আহত করে। হামলায় তার দুটো হাত ভেঙে গেছে।

জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালের অর্থোপেডিক চিকিৎসক আবদুর রহমান বলেন, অফিস সহকারীর দুটি হাত ভেঙে গেছে। এর মধ্যে এক হাতে অপারেশন করে পাত বসানো হয়েছে। অন্য হাত প্লাস্টার করা হয়েছে।হামলার শিকার অফিস সহকারীর শ্বশুর মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, বর্তমানে মো. হাসানকে জেলা শহরের জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। আমরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। আশা করি পুলিশ দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করবে।

মাদরাসার অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ জানান, ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় শিক্ষক এবং অফিস সহকারীর ওপর হামলার ঘটনায় আজ মঙ্গলবার তিনি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। রাজু, নোমানসহ এলাকার বেশ কিছু বখাটে ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য রয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত মাদরাসায় আসা-যাওয়ার পথে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। অভিভাবকদের বলেও কোনো লাভ হয় না।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের পরিবারকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তারা অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা নেব।