বিনোদন ডেস্ক:
‘আমি ভালো নেই, ভালো আমাকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। শরীরটা কোনো ক্রমেই ঠিক হয়ে উঠছে না। অভিনয় করতে পারছি না বলে আমার খুব কষ্ট হয়। আমি অভিনয় করতে পারছি না, এটাই আমার বড় কষ্ট। অভিনয়টা আমাকে খুব টানে। অপেক্ষায় আছি, সুস্থ হয়ে আবার অভিনয়ে ফেরার। এভাবে থাকতে আর ভালো লাগছে না। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’ কয়েক বছর আগে সমকালের এক সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলছিলেন প্রবীর মিত্র। অথচ তাঁর আর সুস্থ হয়ে চিরচেনা অঙ্গনে ফেরা হলো না। চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন। রোববার রাতে চিরপ্রস্থান নেন তিনি।
চিরচেনা অঙ্গনে নিথর প্রবীর
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রবীর মিত্রের মরদেহ আনা হয় এফডিসিতে। অথচ জীবদ্দশায় এখানে প্রবীর মিত্র বারবার আসতে চেয়েছেন। ফিরতে চেয়েছেন কাজে। ফেরা হয়নি, শারীরিক অসুস্থততাই তাঁকে আসতে দেয়নি। যে অঙ্গনে তাঁর যৌবনকাল কেটেছে, রঙিন ফ্রেমে নিজের অভিনয়ের কারিশমা দেখিয়েছেন, সেই অঙ্গনেই তাঁর আসা হয়নি বিগত অর্ধযুগ। তাই এখানে না আসতে পারার যন্ত্রণা তাঁর মন বিষাদ ভারাক্রান্ত করে তুলত। কিন্তু যখন এলেন তখন অন্য এক প্রবীর। প্রাণ নেই, নিস্তেজ এক দেহ কেবল।
কেউ খোঁজ নেয়নি
বহুদিন ধরেই নিজের বাসায় অসুস্থ হয়ে দিনাতিপাত করছিলেন প্রবীর মিত্র। কিন্তু ঢাকাই সিনেমার বর্ষীয়ান এই অভিনেতার খোঁজ নেননি কেউ। বছর দুই আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিষয়টি জানিয়েছিলেন। সে সময় বলেছিলেন, কেউ আমার খবর নেয় না। যেন কারোরই খবর নেওয়ার দরকার নেই। শুধু ভাবি, কেউই তো আমার খোঁজখবর নেয় না। আমিও কারও খোঁজখবর নিই না। কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে জীবনটা।’
বিয়ের সময় ধর্ম পরিবর্তন
নামের কারণে প্রবীর মিত্র হিন্দু না মুসলাম এ নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে অনেকের মনে। সে বিষয়ে খোলাসা করেছেন অভিনেতা মিশা সওদাগর। তিনি জানিয়েছেন, প্রবীর মিত্র ভাই মুসলমানই ছিলেন। তাই ধর্মমতে তাঁর জানাজা ও দাফন করা হয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্র নিজেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। সে সময়ের ভিডিওতে প্রবীর মিত্রকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো কনভার্ট হয়েই ওর মাকে (স্ত্রী) বিয়ে করেছিলাম। তখন মুসলমান হয়েছিলাম। তখন প্রয়োজন হয়েছিল মুসলমান হওয়া, এখনও সে ধর্মেই আছি। প্রবীর মিত্র জানিয়েছিলেন, বিয়ের সময় মুসলমান হিসেবে কনভার্ট হয়েই বিয়ে করেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই মাঝে খবর ছড়ায় প্রবীর মিত্র মুসলমান হয়েছেন। তবে ধর্ম নিয়ে প্রবীর মিত্রের ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধর্ম নিয়ে আমার কোনো বাড়াবাড়ি নাই। সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই। মানুষ সবার উপরে।
উল্লেখযোগ্য সিনেমা
১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রবীর মিত্র ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। অভিনয় করেছেন ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে।
পরিবার
প্রবীর মিত্রের স্ত্রী অজান্তা মিত্র মারা যান ২০০০ সালে। তার তিন ছেলে মিথুন মিত্র, সিফাত ইসলাম, সামিউল ইসলাম। এক মেয়ে ফেরদৌস পারভীন। এদের মধ্যে সামিউল মারা গেছেন। প্রবীর মিত্রের জন্ম ১৯৪১ সালে।
আজিমপুরে চির নিদ্রায়:
এফডিসিতে প্রথম জানার পর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। এরপর প্রবীর মিত্রকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।