জনমনে আতঙ্ক তৈরিতে অঙ্গ কেটে টিকটকে ভিডিও প্রকাশ করতো ওরা

প্রকাশিত: ২:৩০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও কবজি বিচ্ছিন্ন করতো ১৫ থেকে ২০ জনের একটি গ্র“প। পরে এ সব নৃশংসতার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকের বিভিন্ন আইডিতে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতো গ্র“পটি। এতে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন সময় ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি করতো ওরা। এর আগে গত ২৫ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আরমান নামের এক যুবকের কবজি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে গ্র“পটি। পরে এ গ্র“পের সাত জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে আজ শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোর পর্যন্ত বাগেরহাট ও রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব-২ ও র‌্যাব-৬। গ্রেফতাররা হলেন- আহমেদ খান (২২), মো. হাসান ওরফে গুটি হাসান (২৪), মো. হানিফ হোসেন জয় (২৪), রমজান (২৩), মো. রাজু (১৯), মো. রাফিদুল ইসলাম রানা ওরফে রাফাত (২৩), তুষার হাওলাদার (২৩)। আজ শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।


তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আরমান নামের এক যুবকের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে। এ ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদ থানায় গত ২৭ আগস্ট একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী আরমান। পরে র‌্যাব-২ এর একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আহমেদ খান (২২), হাসান ওরফে গুটি হাসান (২৪), হানিফ হোসেন জয় (২৪), রমজান (২৩), রাজুকে (১৯) গ্রেফতার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় আরমান নামের ওই যুবকের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালকারী মো. রাফিদুল ইসলাম রানা ওরফে রাফাত (২৩) ও তার সহযোগী তুষার হাওলাদারকে (২৩) বাগেরহাট থেকে র‌্যাব-৬ এর আভিযানিক দল গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে খন্দকার আল মঈন বলেন, তারা সবাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় একটি সন্ত্রাসী গ্র“পের সদস্য। প্রায় ১৫-২০ জন সদস্যের সন্ত্রাসী এ গ্যাং রাফাত, তুষার ও আনোয়ারের নেতৃত্বে গত ৪-৫ বছর ধরে মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে।
তারা পথচারীদের একা পেলে হঠাৎ করেই চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করতো। চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতো। এমনকি বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো।
কবজি বিছিন্ন করার ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, পূর্ব শত্রæতার জের ধরে তুষার ভুক্তভোগী আরমানের বাম হাতে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে বাম হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে এবং রাফাত ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে ভুক্তভোগী আরমানের ডান হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন করে।
রাফিদুল ইসলাম রানা ওরফে রাফাত মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় বিগত ৪-৫ বছর ধরে একটি সন্ত্রাসী গ্র“প পরিচালনা করতো। ঘটনার পর গ্র“পের প্রধান হিটম্যান হিসেবে পরিচিতি রাফাত ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে প্রথমে ফরিদপুরের একটি মাজারে গিয়ে কয়েকদিন অবস্থানের পর বাগেরহাটে আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেফতার তুষার হাওলাদার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পরিকল্পনা করতে আর আহমেদ খান টার্গেট করতেন। কবজি বিচ্ছিন্নে ঘটনার সময় রাফাত ও তুষারের সঙ্গে আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া হাসান ওরফে গুটি হাসান, হানিফ হোসেন জয়, রমজান ও রাজু এ সন্ত্রাসী গ্র“পের সহযোগী সদস্য। তারা সবাই গ্রেফতার রাফাতের নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভুক্তভোগীকে একই কায়দায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করতো।
তিনি বলেন, টার্গেট নির্বাচনের পর পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ভুক্তভোগীকে নৃশংসভাবে হামলা করে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতো। পরে এসব নৃশংসতার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতো। এসব ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।