জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দিতে আপত্তি নেই: শিক্ষা উপদেষ্টা

প্রকাশিত: ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৪

রুমা আক্তার:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। মঙ্গলবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিটিং শেষে সাংবাদিকদের কাছে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একটি ক্যাম্পাস যেটা পরিকল্পনা কমিশনে পড়েছিল। এটা এত বড় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যাম্পাস প্রকল্প যেটা আগে কখনও হয়নি। এত বড় ক্যাম্পাস পাকিস্তান আমলের শেষের দিকে জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছিল। এই মেগা প্রজেক্ট আমরা নেব কিনা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। সেটার মেয়াদ বৃদ্ধির কাগজপত্র দীর্ঘদিন ধরে প্লানিং কমিশনে পড়েছিল। আমি নিজ উদ্যোগে একনেক সভায় পাস করেছি। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে এটি একটি বিরাট মেগা প্রজেক্ট বলা যেতে পারে।
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি আমরা বুঝতে পেরেছি। এত বছর ধরে কেন ক্যাম্পাসের কাজ শেষ হয়নি। জমি অধিগ্রহণ কেন শেষ হয়নি, তারা বলেছে। জানিয়েছে- সেখানে প্রজেক্ট ডিরেক্টরের নানা দুর্নীতি আছে। তবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত করুক। প্রয়োজনে নতুন প্রজেক্ট ডিরেক্টর নিয়োগ দিক।

সেনাবাহিনীকে ক্যাম্পাসের কাজ দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষার্থীরা চাচ্ছে সেনাবাহিনীকে দিয়ে ক্যাম্পাসের কাজ বাস্তবায়ন করানো হোক। এতে কোনো সমস্যা নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি চায়, তারা তো স্বায়ত্তশাসিত অনেকাংশেই। এক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দিয়ে করাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো আপত্তি নেই বরং আমরা সহযোগিতা করব কীভাবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া যায়।

শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে ফিরে যাবে এমন আশ্বাস পেয়েছেন কিনা- জানতে চাইলে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থীদের অনেক দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। তাদের কথা শোনার জন্যই অসুস্থ শরীর নিয়ে এসেছি। এখানে ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। তাদের প্রতি আমাদের আশা আছে।

এ দিন দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে শিক্ষা উপদেষ্টার কক্ষে আলোচনা শুরু হয়। শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে ৫০ মিনিটের মতো আলোচনা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সভায় ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমীন, প্রক্টর ড. তাজাম্মুল হক, অধ্যাপক ড. রইস উদ্দীন এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের পক্ষে আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিফ মাহমুদ সোহান ও সংগঠক এ কে এম রাকিব।

বৈঠক শেষে জবির ৫ দফা আন্দোলনের সংগঠক এ কে এম রাকিব বলেন, যেহেতু আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণ হয়েছে, তারা আমাদের সঙ্গে একমত তাই আমরা আমাদের আল্টিমেটাম থেকে সরে আসছি।

আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া বর্তমান পিডিকে সরিয়ে সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তাকে নিয়োগের লক্ষ্যে আজই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হবে ইউজিসিতে।

এর আগে সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। তাদের দাবিগুলো হলো- স্বৈরাচার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ডিরেক্টরকে আইনের আওতায় আনা, সাত দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসারদের হাতে এই দায়িত্ব অর্পণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট রূপরেখাসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের ঘোষণা, অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে বিগত সরকারের আমলের সকল চুক্তি বাতিল, সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণা করা পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।