হাবিবা ইসলাম
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিবেচনায় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সব প্রাকৃতিক দুর্যোগই সাময়িক অথবা দীর্ঘ সময়ের জন্য মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কষ্ট ও জীবনসংগ্রামের বিষয়ে আমরা সবাই অবগত।
জলবায়ু সংকটের কারণে স্থানচ্যুত হওয়া মানুষের ৮০ শতাংশই নারী। সংঘাত ও সংকট– যেমন কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে বা পানির অভাব ও ফসলহানির প্রভাবে গণ-অভিবাসনের সময় অভিবাসনের যাত্রাপথ ও শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন জায়গায় নারী ও মেয়েরা জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার মুখোমুখি হওয়ার বৃহত্তর ঝুঁকিতে থাকেন।
এসব ঝুঁকি থেকে বের হয়ে আসতে আজ রোববার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন আগারগাঁওয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব এবং ঝুঁকি সম্পর্কে বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নারী মৈত্রীর আয়োজনে অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন নারী মৈত্রীর সভানেত্রী (প্রেসিডেন্ট) মাসুমা আলম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জনাব মেহের আফরোজ চুমকি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শবনম জাহান শিলা এমপি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান, ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই ব্যাংকিং বিভাগের নারী উদ্যোক্তা সেলের প্রধান খাদিজা মরিয়ম ও এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার।
স্বাগত বক্তব্যে নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেন, ‘আমরা দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে যতটা কাজ করি। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা এবং তা সমাধানের মাধ্যমে তাঁদের এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য কাজ করছি।’
সরকারের নীতি সহায়তা এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে নারী উদ্যোক্তা তৈরি ও উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তারপরও নারীর চলার পথ এখনো বাধাহীন না। নারী চাইলেই স্বাচ্ছন্দ্যে তাঁর ব্যবসায়িক কাজ করতে পারেন না। তাঁদের জন্য একটা সহায়ক পরিবেশ দরকার। তাই নারী মৈত্রী বিশ্বাস করে সূদুর ভবিষ্যতে নারী নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান তৈরিতে যেমন ভূমিকা রাখতে পারবে, ঠিক তেমনি নারী উদ্যোক্তাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা আরও জোরালো হতে সহায়তা করবে বলে জানান নারী মৈত্রীর সভানেত্রী মাসুমা আলম।
তৃনমূল পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তা রিনা আকতার বলেন, অনেক খারাপ সময়ে আমার পাশে ছিল নারী মৈত্রী। আমি অনেক কিছু জানতাম না, বুঝতাম না, এমন সময় নারী মৈত্রীর আপারা আমাকে সহায়তা করেন এবং বর্তমানে আমি একজন সফল উদ্যোক্তা।
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আজকের নারীরা থেমে নেই। সব নারী সূর্যের মতো জ্বলে উঠছে আপন সত্বায়। জীবনে এগিয়ে যেতে সবাইকে কাজ করতে হয়, জীবনের নানান বাস্তবতার সম্মুখীন সবাইকে হতে হয়। বাধা যেমন আসবে সেই বাধা থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসার রয়েছে সমাধান। থমকে যাওয়া যাবে না, সেজন্যও আমাদের জন্য রয়েছে যথেষ্ট সচেতন। এছাড়াও শহুরে নারীর পাশাপাশি গ্রামীণ নারী যাতে কোনোভাবেই পিছিয়ে না থাকে, সেদিকেও নজর দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।