জাতীয় দলের হয়ে ১০ উইকেট নিতে চান হাসান মুরাদ

প্রকাশিত: ৩:৫০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২৫

ক্রীড়া ডেস্ক:

কক্সবাজারের ক্রিকেটার হাসান মুরাদ। বয়স মাত্র ২৩ বছর। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে উঠলেও মূল দলে এখনো খেলা হয়নি। ২০২৩ সালে খেলেছিলেন এশিয়ান গেমসে। স্বপ্ন এখন মূল দলে খেলার। যেখানে তিনি বল হাতে ১০ উইকেট নেওয়ার স্বপ্ন দেখেন। মুরাদ থাকছেন জাতীয় দলের ছত্রছায়ায়। ক্যারিবিয়ান সফরে সাদা পোশাকের প্রস্তুতি ম্যাচে নিয়েছিলেন হ্যাটট্রিক উইকেট। ২০২২ সালে এনসিএলের এক ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী বাঁহাতি এই স্পিনার। একাদশ বিপিএলে খেলছেন দুর্বার রাজশাহীর হয়ে। সিলেট পর্ব চলাকালীন দৈনিক ইত্তেফাকে দিয়েছেন একান্ত সাক্ষাৎকার। পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীর হয়ে প্রত্যাশা কী?

মুরাদ: লম্বা টুর্নামেন্ট তো, একটা-দুইটা ম্যাচ আমরা বের করতে পারি নাই, এমনটা হবেই। তবে প্রয়োজনের মুহূর্তে দল ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করি। আর সবাই আসেই তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। আমাদের প্রত্যাশাও ঐরকম। দলের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া রয়েছে। সারা বছর তো সকলে একসঙ্গেই খেলি। কোনো না কোনো দলে খেলি। সেটিও কাজে লাগছে।

প্রশ্ন: জন্মস্থান কক্সবাজার থেকে উঠে আসার গল্পটা কী?

মুরাদ: বড় কোনো গল্প নেই। বিকিএসপিতে ট্রায়াল দিয়েছিলাম। তার আগে অ্যাকাডেমিতে সেভাবে অনুশীলন করা হয়নি। টেপ টেনিস বলে খেলা হতো সেখানে। এলাকার বড় ভাইদের খেলা দেখতাম। সেখানে আমিও খেলতাম। তারা আমাকে বিকেএসপি সম্পর্কে বলেছিলেন। সেখান থেকেই জানা। বিকিএসপির প্রতিভা অন্বেষণের ক্যাম্প হয় এক-দুই মাসের। ঐ ক্যাম্পে ট্রায়াল দিয়ে সুযোগ পেয়ে যাই। আর এখন তো ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নিয়েছি।

 

প্রশ্ন: আপনার বাবা-মা কোথায় থাকেন, তারা খেলা দেখেন?

মুরাদ: কক্সবাজারে থাকেন। আমার খেলাও দেখেন। ভালো-খারাপ যা-ই হোক, সব সময় তাদের পাশে পাই। তারা তো ভালো-খারাপ খুব বেশি চিন্তা করেন না, প্রত্যাশা করেন যেন ভালো করি। খারাপ করলেও পাশে থাকেন। ভালো করলে বলেন, যত ভালো করা যায়। তাদেরও প্রত্যাশা তখন বাড়ে। যখন খারাপ সময় আসে, তখন তাদের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করি। তাতে মনটাও হালকা হয়।

প্রশ্ন: ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতি কেমন ছিল?

মুরাদ: বিশ্বকাপ জয় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এমন একটা স্মৃতি সবসময় বাড়তি অনুপ্রেরণা দেবে।

প্রশ্ন: সে সময়কার কোনো মজার স্মৃতি আছে?

মুরাদ: বাংলাদেশের একটা ঐতিহ্য রয়েছে মুড়ি মাখিয়ে খাওয়া, আমরা সেখানে মুড়ি মাখিয়ে খেতাম। দেশের বাইরে তো বাংলা খাবার পাওয়া কষ্টের। তখনকার ফিল্ডিং কোচ ডিকেন্স স্যার সবকিছু আয়োজন করতেন। ঐ জিনিসটা ভীষণ মজা লাগত। বিশেষ করে যখন এটা করা হতো, সেই বিকেল বেলার কথা এখনো মনে পড়ে।

 

প্রশ্ন: মুড়ি মাখানোর জন্য মরিচ দরকার পড়ে, সেটি কোথায় পেতেন?

মুরাদ: সবকিছু ডিকেন্স স্যারের কাছে থাকত। জানি না কোথা থেকে নিয়ে আসত, কিন্তু উনি ম্যানেজ করে ফেলতেন। সবকিছু আয়োজন করে আমাদের ডাকতেন, আমরা গিয়ে খেতে বসে যেতাম।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ নিয়ে ফেরার অনুভূতি কেমন ছিল?

মুরাদ: আসলে এমন কিছু হয় যে, ভাষায় প্রকাশ সম্ভব হয় না। বিশ্বকাপ জয় করে যখন বাড়িতে ফিরেছি তখন এমন অনুভূতি পেয়েছিলাম। বাবা-মায়ের চেহারা হাসিতে ভরে উঠেছিল, সেটি এখনো মনে পড়ে।

প্রশ্ন: এনসিএলে ৮ উইকেট নেওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

মুরাদ: খেলা শুরুর আগে ওভাবে তো চিন্তা করে মাঠে নামিনি। খেলা চলছিল, চলতে চলতে ৮ উইকেট হয়ে গেছে। যখন ৮ উইকেট পেলাম, তখন মনে হলো একটা অর্জন হলো।

 

প্রশ্ন: সামনে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হলে ৮ উইকেট নিতে চান?

মুরাদ: অবশ্যই নিতে চাই। ৮ উইকেট না, ১০ উইকেট নিতে চাই। তবে উইকেট নেওয়ার থেকে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কীভাবে ম্যাচ জয়ে ভূমিকা রাখছি। উইকেট সংখ্যা থেকে আমি ম্যাচ জয়টা বেশি উপভোগ করি।

প্রশ্ন: কক্সবাজার থেকে যারা ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তাদের জন্য আপনার কী বার্তা?

মুরাদ: আমি প্রতিনিয়ত একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করি। যারা এখনও ক্রিকেটার হয়নি কিংবা যারা উঠে আসার চেষ্টা করছেন, অনূর্ধ্ব-১৪ খেলছেন অনুশীলন করছেন, যারা বয়সভিত্তিক দলে খেলছেন, তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হওয়া চেষ্টা করি। আমি যেহেতু পারছি এখানে আসতে, তারাও পারবে।