জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় ছাত্র সংগঠনগুলো

প্রকাশিত: ৩:২৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

দেশের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সেক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চান তারা।

সোমবার বিকাল ৩টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত ‘ছাত্র রাজনীতির সংস্কার: প্রসঙ্গ ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চাকসু…’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা৷

সভায় বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারীদের নির্বাচন হয়, শিক্ষকদের নির্বাচন হয় প্রতি বছর তাহলে ছাত্রদের নির্বাচন কেন হবে না? ছাত্র সংসদ নির্বাচন কেন হবে না? রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য তরুণদেরকে রাজনীতির দিকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। কারণ রাজনীতিবিদরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, সংস্কার করেন। ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনের পর ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়েছিল এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম তারা করতে পেরেছিল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা প্রতিবাদী চেতনা গড়ে উঠে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি হয়েছিল। ডাকসু না হলে আমাদের সেই রাজনীতিতে আসা হতো না। ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চাকসু’র ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো সেসময় যদি ধারাবাহিকভাবে হতো তাহলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের গ্রুপ তৈরি হতো। এখন সুযোগ হয়েছে, অবশ্যই এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। এখন সকলের দাবি, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার দরকার আছে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে নেতৃত্ব উঠে আসবে তারা হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সামনের দিকের সেফ গার্ড। আমি মনে করি এ সেফ গার্ড ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হয়ে আরেকটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে ছাত্রজনতা সংকোচবোধ করবে। আমাদের সেফগার্ড দরকার কারণ আমরা অনেকবার ঠকেছি।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ছাত্ররাজনীতি ছিল, আছে এবং থাকবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বেও ছাত্র রাজনীতি ছিল। যে ছাত্রনেতারা মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছিল। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশের সংকটের সময়ে দেশের মানুষ যখন প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর উপর থেকে ভরসা হারিয়ে ফেলেছিল, তখন ছাত্রদের ডাকে সাধারণ মানুষ আন্দোলনে অংশ নিয়ে সরকারের পতন ঘটিয়েছে। নব্বইয়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে চব্বিশের আন্দোলন ছিল ছাত্রদের আন্দোলন। এজন্য ছাত্রদের রাজনৈতিক সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ বলেন, ছাত্ররাজনীতির যৌক্তিক সংস্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ছাত্ররাজনীতি হবে ছাত্র সংসদ ভিত্তিক। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো আদায় করতে সক্ষম হবে।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ছিল। আমরা দেখেছি ১৯৯৩ সালে শিক্ষকদের সঙ্গে জাকসুর নেতৃবৃন্দের সংঘর্ষের ফলে জাকসু বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে জাকসু বন্ধ রয়েছে। জাকসু করে লাভ কি যদি মানবিক মূল্যবোধ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের জায়গা না বুঝি? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী, জাকসু থাকতে হবে। তাহলে জাকসুর সভাপতি হিসেবে আমি কেন জাকসু দেব না?

এছাড়া, আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি খায়রুল আহসান মারজান, সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিখ, ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়া জিসান।