জাতীয় পার্টির (জাপা) নবম কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর)। ৩ বছর ১১ মাস ১০ দিন পর আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এ সম্মেলন শুরু হচ্ছে। সম্মেলনের একদিন আগেই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে দলীয় গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে সৃষ্টি করা হয়েছে বেশ কিছু পদ। আর এই পদগুলো নিজেদের বলয়ের শক্তিসাপেক্ষে প্রেসিডিয়ামের সদস্যরা ভাগ করে নিয়েছেন। শনিবার কেবল এই সংশোধনী কণ্ঠভোটে পাস করিয়ে নেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলটির একাধিক তরুণ নেতা ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, জাপায় এখন সবাই নেতা। আর শনিবার যে সম্মেলন হচ্ছে, সেটি কেবল নিয়মরক্ষার স্বার্থেই হচ্ছে। সম্মেলন থেকে নতুন কোনও চমকের খবর আসবে না বলেও তারা মনে করেন।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে ‘চিফ প্যাট্রন’ নির্বাচিত করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এবারের সম্মেলনে মূল আকর্ষণ—এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে ‘চিফ প্যাট্রন’ নির্বাচিত করা। দলে তার সম্মান থাকবে সর্বোচ্চ। মিটিং বা সাধারণ সভাসহ সবখানেই তার এই সম্মান থাকবে।’’
জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এবারের সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু ধারা সংযোজন হচ্ছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—দলে একটি সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং ৬ জন কো-চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া, ৮টি সাংগঠনিক বিভাগের জন্য ৮ জন অতিরিক্ত মহাসচিবের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। দলের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে ৮ জনকে অতিরিক্ত মহাসচিব করা হবে। বর্তমানে প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসেবে আছেন ৫১ জন।
এ প্রসঙ্গে দলের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদে বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আসতে পারেন। কো-চেয়ারম্যান পদগুলোয় প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমামের নাম আলোচনায় রয়েছে। এই নেতারা রওশন ও জিএম কাদেরপন্থী হিসেবে দলে পরিচিত।
জাপার কয়েকজন তরুণ নেতা মনে করেন, সম্মেলনের আগে নিজেদের প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে পদ সৃষ্টি করা হবে। একইসঙ্গে সিনিয়র নেতারা এসব পদে নিযুক্ত হবেন। তখন দীর্ঘস্থায়ীভাবে সাংগঠনিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত হবে। এমনকি সম্মেলনের মধ্য দিয়েই দলের স্থায়িত্ব কমে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন তারা। তবে, সিনিয়র নেতাদের প্রায় সবাই পদ ভাগ করে নেওয়ায় তরুণ নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি মনে করি এবারের সম্মেলন দাবানলের মতো। অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে মাঝে মাঝে এরকম দাবানল, আগ্নেয়গিরি হতে দেখা যায়। যা সব পুড়ে ছাই করে দেয়। এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে জাপা যা সৃষ্টি করতে যাচ্ছে, এর মাধ্যমে পার্টি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।’
তবে রওশনপন্থী জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম মনে করেন, ‘গঠনতন্ত্রে নতুন পদ সৃষ্টির মাধ্যমে দলীয়ভাবে যেসব দ্বিমত ও বিরোধিতা রয়েছে, সেগুলো দূর হবে।’
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি জাপাকে রাজনৈতিক দল হিসেবে দেখি না। এটি একটি সিন্ডিকেট। এই ধরনের দলের কোনও নীতি-আর্দশ নেই। কোনও কর্মসূচিও নেই। থাকলেও তা নামমাত্র।’
রাজনৈতিক লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির এই বিশাল বহরের খবর আমি সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি। এই পার্টি নিয়ে আমরা কোনও আগ্রহ নেই। এই দলে জনগণের জন্য কোনও রাজনীতি নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘দলকে সুসংগঠিত করার জন্য এত পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। দলের সবাইকে পদ দিলে, তারা নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। ফলে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা বাড়বে।’ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও জানান রাঙ্গা।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৬ সালে মার্চে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপস্থিতিতে দলটির অষ্টম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলের আগে ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে সরিয়ে বসানো হয় রুহুল আমিন হাওলাদারকে। এরপর একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিব পদে বসানো হয়।
চলিত বছরের ১৪ জুলাই রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এরশাদ। এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ীই মৃত্যুর পর দলটির চেয়ারম্যান হন তার ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।
দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নির্বাচন প্রসঙ্গে রাঙ্গা বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরই থাকবেন।’ আর মহাসচিব পদে পরিবর্তনের কোনও আশঙ্কা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। খবর বাংলা ট্রিবিউন।