জানাজা ও জুমার নামাজে আগত মুসুল্লিদের টার্গেট করে মোবাইল সেট চুরি করতো ওরা

প্রকাশিত: ৩:২২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: 

জানাজা ও জুমার নামাজ আদায় করতে যাওয়া মুসল্লিদের টার্গেট করে মোবাইল চুরি করতো ওরা। সংঘবদ্ধ এ চোর চক্রের সক্রিয় ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। এসময় তাদের হেফাজত থেকে চুরি করা ল্যাপটপ, মোবাইল সেটসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতাররা হলেন- মো. বাহাউদ্দিন হোসেন মিজি (৩৫), রমজান আলী (২৯), মো. হামিম আহমেদ (৩৪), মো. আতিকুল ইসলাম (২৮), মো. পারভেজ হাসান (১৮), মো. মাসুদুর রহমান (৩২), মো. সাইফুল ইসলাম (২৮), মো. ফয়সাল আহমেদ রনি (৩৪) ও মো. মিল্লাত হোসেন (২৬)। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বারিধারায় এটিইউয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান পুলিশ সুপার (অপারেশন) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন,  গত বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর চাঁনখারপুল, জুরাইন বিক্রমপুর প্লাজা, ও

বুড়িগঙ্গা সেতুমার্কেট ও যমুনা ফিউচার পার্কসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এসময় তাদের কাছ থেকে তিনটি ল্যাপটপ, একটি মনিটর, সাতটি মোবাইল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ সামগ্রী ও মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত ১৬টি ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে।

 

এটিইউ বলছে, গ্রেফতাররা ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, ওয়াজ মাহফিল এবং মানুষের জানাজাসহ জনসমাগমস্থল থেকে মোবাইল ফোন চুরি করেন। এরপর চোরাই মোবাইল সেটের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে কেনাবেচা করে থাকেন।

তিনি বলেন, চক্রটির সদস্যরা ফেসবুক পোস্টে খুঁজতে থাকে ঢাকা ও এর আশপাশে কোনো জানাজা আছে কি না। কোনো জানাজার সন্ধান পাওয়ার পরে তারা খোঁজ-খবর নিতে থাকে সেখানে কেমন মানুষের সমাগম হতে পারে। এই কাজের কোড নাম দেয় ‘বডিকাজ’। জানাজার স্থান নির্ধারণ হওয়ার পর তারা সেখানে পায়জামা, পাঞ্জাবি ও টুপি পরে যায়। সেখানে গিয়ে তারা গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়। প্রত্যেকটি গ্রুপে তিনজন করে সদস্য থাকে।

এটিইউয়ের পুলিশ সুপার বলেন, এ গ্রুপের সদস্যরা জানাজার ভিড়ের মধ্যে কৌশলে একজনের পকেটে থেকে মোবাইল চুরি করে গ্রুপের দ্বিতীয় সদস্যকে দেয়। দ্বিতীয় সদস্য মোবাইলটি আবার তৃতীয় আরেকজনকে দেয়। মোবাইল হাতে পাওয়ার পর তৃতীয় ব্যক্তি জানাজার স্থান ছেড়ে চলে যায়। পকেট থেকে মোবাইলটি যে চুরি করে নিয়ে আসে তাকে বলা হয় ‘মহাজন’। জানাজা ছাড়াও চক্রটির টার্গেটে থাকত শুক্রবারের জুমার নামাজ।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবার যেসব মসজিদে বেশি মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করতে আসেন, সেসব মসজিদে চক্রটির সদস্যরা তিনজনের গ্রুপ করে অবস্থান নিত। জুমার নামাজের কাতারে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে একই কায়দায় মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায় তারা। মসজিদের এই চুরিকে তারা ‘মসজিদ কাম’ বলতো। জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে চক্রটির সব থেকে বেশি গ্রুপ সক্রিয় থাকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে।

তিনি বলেন, চক্রের সদস্য বাহার চোরাই মোবাইল গ্রুপগুলো থেকে সংগ্রহ করতো। বাহারের একজন মোটরসাইকেলচালক আছে। যে বাহারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রুপগুলো থেকে মোবাইল সংগ্রহ করে। বাহার পরে মোবাইলগুলো গ্রেফতার মাসুদের কাছে পাঠিয়ে দিত। গ্রেফতার মাসুদের কাজ হচ্ছে চোরাই মোবাইলগুলো নির্দিষ্ট দোকানে পৌঁছে দেওয়া।

এটিইউয়ের পুলিশ সুপার আরও বলেন, তদন্তে এমন তিনটি দোকানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জুরাইনের বিক্রমপুর প্লাজার এসআই টেলিকম যার মালিক গ্রেফতার সাইফুল, জুরাইনের সেতু মার্কেটের ফয়সাল টেলিকম যার মালিক গ্রেফতার ফয়সাল ও যমুনা ফিউচার পার্কের চতুর্থ তলার একটি দোকান যার মালিক গ্রেফতার মিল্লাত। এসব দোকানে টেকনিক্যাল ও মোবাইল বিক্রির কাজ চলতো। প্রথমে মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে মোবাইলগুলোর প্যাটার্ন লক খোলা হতো ও সবশেষে মোবাইল থেকে ল্যাপটপের মাধ্যমে ফ্ল্যাশ দিয়ে বিক্রি করা হতো।