জাবিতে রাচির মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা

প্রকাশিত: ৪:৩৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় মার্কেটিং বিভাগের ৫৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচির মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।রোববার (২৪ নভেম্বর) সকাল নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বেলা ১১টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে সাড়ে ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে আবার নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের এগারো দফা দাবির মধ্যে একটি দাবি ছিল রিকশাওয়ালাকে শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ওই একটি দাবি পূরণের জন্য তারা প্রশাসনকে দু’দিনের সময় বেধে দিয়েছিলেন। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে না পাওয়ায় তারা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন এবং প্রশাসনিক ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।
তাদের দাবিগুলো হলো- ১) সাত কর্মদিবসের মধ্যে সিন্ডিকেট মিটিং ডেকে জাবি মেডিকেল সেন্টারে মুমূর্ষু ব্যক্তির পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ২) রাচিকে মরোণত্তর ডিগ্রি প্রদান ও তার পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ৩) অটোরিকশা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা, ৪) বিকল্প হিসেবে প্যাডেল চালিত রিকশা ও স্টুডেন্ট শাটল চালু করা, ৫) ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা এবং সিসিটিভি নিয়মিত মনিটরিংয়ের আওতায় রাখা, ৬) পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী রাখতে হবে ও ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধের উপর কঠোর জোর দেওয়া, ৭) রাচির স্মরণে ক্যাম্পাসে স্থায়ী স্মৃতিফলক নির্মাণ করা এবং নির্মাণাধীন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির একটি অংশের নাম রাচির নামে করা, ৮) শিক্ষার্থীদের তদন্ত কমিটিতে পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখা, ৯) রাস্তার মোড়ে সাইড মিররের ব্যবস্থা করা ও ফুটপাত নির্মাণ করা।

এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের ৫৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল বলেন, ‘রাচির ঘটনার পর মূল কাজ ছিল অপরাধী শনাক্ত করা। কিন্তু প্রশাসন সেটা না করে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে সকাল থেকে আমরা রেজিস্টার ভবনে তালা দিয়ে রেখেছি। রাচির হত্যাকারীকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার যথেষ্ট কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাচ্ছিনা। অপরাধীকে শনাক্ত না করে যতক্ষণ পর্যন্ত শাস্তির আওতায় না আনা হবে আমরা ক্লাসে ফিরব না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৫৩ তম ব্যাচের মো. নাজমুল বলেন, ‘আমাদের ১১ দফার এক দফা ছিল রাচির হত্যাকারীকে যতক্ষণ পর্যন্ত বিচার না করা হবে আমরা ক্লাসে ফিরব না। আমরা গত শুক্রবার এবং শনিবার দুইদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। তবে প্রশাসন কোনো ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এজন্য আমরা প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক ভবন তালা দিয়েছি এবং ৫৩ তম ব্যাচ সম্পূর্ণরূপে ক্লাস বর্জন করছি।’

এদিকে দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে ঘটনাস্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এম মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুর বর ও প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম প্রমুখ। তারা আগামী সাত দিনের মধ্যে সকল দাবি বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দেন। তবে ঘাতক রিকশাচালকে শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় না আনা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন না বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে। তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছি আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাদেরকে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।’