জেলা প্রতিনিধি,জামালপুরঃ
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় ২৪ দিনেরও বেশি সময় ধরে বৈশাখী মেলার নামের চলছে প্রকাশ্য মাদকসেবন ও বেচাকেনা। পাশাপাশি চলছে জুয়ার আসর ও অশ্লীল নৃত্য। তবে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন এসব মাদক সেবন ও বেচাকেনার বিষয় জেনেও নিরব রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সচেতন নাগরিকেরা।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, উপজেলার দুরমুট এলাকায় পীর ও সাধক হযরত শাহ কামাল (রহ) ইয়েমেনীর মাজার অবস্থিত। এই মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের প্রথম দিন থেকেই মাস ব্যাপী বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মেলাকে কেন্দ্র করেই মাজারে এক কিলোমিটার আশপাশে বসে বিভিন্ন দোকান। তবে মেলায় আসা ভক্তদের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে গাঁজা। এবার মেলায় ভক্তদের প্রায় ৫০০ দোকান রয়েছে।
বৈশাখী মেলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাজারো মানুষের ভিড়। দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে মেলাটির নানা কার্যক্রম। বিভিন্ন জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। মাজারটির দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে পুকুরের পাড়ে, পুকুরসংলগ্ন বাগানে গাঁজা সেবন ও বিক্রির জমজমাট আসর চলছে। মেলার বিভিন্ন জায়গায় তাবু টানিয়ে বসানো হয়েছে গাজার দোকান, এছাড়া অনেকে পাটি পেতে গাঁজা বিক্রি করছেন। পুরো মেলাজুড়ে ছোট-বড় ৫০০ মেলার দোকান চোখে পড়ে। পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারি সত্ত্বেও সেখানে প্রকাশ্যে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। চলছে গানের আড্ডা ও গাঁজা সেবন। তবে বেশিরভাগ ভক্তদের আস্তানায় অল্প বয়সী কিশোর ও শিক্ষার্থীরা গাঁজা সেবন করছে। এছাড়া নেশাখোরেরা সেখানে এসে আড্ডা দিচ্ছেন। এদিকে মেলা এলাকায় সার্কাস নামে রাতে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসরও দেখা গেছে।
জামালপুর সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, বৈশাখী মেলায় প্রকাশ্যে এভাবে গাঁজা সেবন বন্ধ করা প্রয়োজন। না হলে যুবসমাজ ও শিক্ষার্থীরা মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে ওই এলাকার তরুণ শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওই মেলায় গাঁজা সেবন ও বেচাকেনা বিষয়টি উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন সহ সবাই জানলেও তেমন কোনো অভিযান পরিচালনা হয়নি।
দুরমুট এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, এই মেলার জন্য পুরো একমাস এই এলাকার মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে না। রাতদিন ২৪ ঘন্টা উচ্চস্বরে বাজে গান বাজনা। বৈশাখ মাস আসলেই অশান্তি শুরু হয়ে যায় এই এলাকার মানুষদের। এই এলাকার তরুণ ও কিশোরেরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মেলায় গেলেই অল্প টাকায় মিলেছে গাঁজা।
মেলায় আব্দুল গফুর নামে এক ভক্তের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বহু বছর ধরে এই মেলা চলে আসছে, তবে আগে মেলায় পাগলাদের সমাগম হইতো না। এখন মেলার শুরু না হতে মেলায় বিভিন্ন জায়গা থেকে পাগলরা এসে এই জায়গায় আস্তানা করে। এই জায়গায় প্রতিদিন রাতে প্রায় পাঁচশ আসর বসে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রকৃত পাগল নাই। দূরদূরান্ত থেকে যেগুলো এসেছে সেগুলা ব্যবসা-বাণিজ্য করতেই এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভক্ত বলেন, আমি এখানে প্রায় ১৭ দিন ধরে এসেছি। এই জায়গায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে সোহেল নামে একজন। তার কথাই সবকিছুই হয়। রাত ৯টার পর থেকে আসরের লোকজন বেশি আসতে শুরু করে। দিনের বেলায় তেমন লোকজন থাকে না। এখানে গাঁজা ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা করে নিয়ে সেবন করা যায়।
এ বিষয়ে মেলা কমিটির সভাপতি ও দুরমুট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেকুজ্জামান জুবেরীকে মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, কিছুদিন আগেও অভিযান পরিচালনা করে গাঁজাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলা পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন।মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবা হক বলেন, মেলায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আর সব সময় পুলিশ টহলে রয়েছে। আমি নিজেও কয়েকদিন অভিযান পরিচালনা করেছি।