এসএম দেলোয়ার হোসেন:
ওরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। ওরা স্মাগলিং ও মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত। ২০০৭ সাল থেকে ওরা গড়ে তুলে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। তখন থেকেই অনৈতিক এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে ভারতীয় জালরুপি ও টাকা তৈরির কাজ শুরু করে। গড়ে তোলে একটি কারখানা। সেই কারখানায় তৈরি করা ভারতীয় জাল রুপি ও এ দেশীয় জাল টাকায় মাদক কারবার করে আসছিল ওরা। এমনই একটি চক্রের তিন সদস্য পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। সন্ধান পেয়েছে ভারতীয় জালরুপি ও এ দেশীয় জাল টাকা তৈরির কারখানার। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জাল টাকা ও টাকা তৈরির সরঞ্জামাদি। গ্রেফতাররা হলো- মাহি (১৯), সাজ্জাদ হোসেন রবিন (৩৮) ও সাদমান হোসেন হৃদয় (৩০)। আজ শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুর ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাফর হোসেন।
তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার (৪ আগস্ট) লালবাগ থানা সংলগ্ন আরএনডি রোডের শ্মশানঘাট কালিমন্দিরের সামনে থেকে প্রথমে একজনকে এবং পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে লালবাগ থানা পুলিশ। এসময় উদ্ধার হয় ভারতীয় জাল ১ লাখ রুপি, ১০ লাখ ২০ হাজার জাল টাকা এবং বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। এই চক্রটি এখন পর্যন্ত ৫ কোটিরও বেশি জাল টাকা বাজারে ছেড়েছে।
লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাফর হোসেন জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় লালবাগ শ্মশানঘাট কালিমন্দিরের সামনে থেকে মো. মাহিকে ১ হাজার টাকার ৫০টি জাল নোটের ৫০ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে, মাহির মামা সাজ্জাদ হোসেন রবিন ও সাদমান হোসেন হৃদয়কে কেরানীগঞ্জের কামারগাঁওয়ের একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে এক হাজার টাকার ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকার ৯৭০টি জাল নোট এবং ভারতীয় ৫০০ রুপি মূল্যের ১ লাখ রুপির ২০০টি জাল রুপি, ল্যাপটপ, প্রিন্টারসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, চক্রের মূলহোতা সাজ্জাদ হোসেন রবিন একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। ২০০৭ সালে শহীদ নামে তার এক বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয়। এ ধরনের জাল টাকা তৈরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন শহীদ। তার সঙ্গে জাল টাকা তৈরি শুরু করেন রবিন। শহীদ মারা যাওয়ার পর জাল টাকা তৈরি বন্ধ করে দেন রবিন। এরপর রবিন ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করেন। করোনাকালে তার ব্যবসা বাণিজ্যে ধস নামে। কর্মীদের বেতন দিতে পারছিলেন না। তখনই তার সঙ্গে পরিচয় হয় চক্রের মূল সদস্য মো. হুমায়ুন কবির সিকদার (৪২) ও মো. শফিউল্লাহ সিকদারের সঙ্গে। তারা জাল টাকা তৈরির জন্য কাজ করে দিতে বলেন রবিনকে। ২০২০ সাল থেকে রবিন আবারও জাল টাকা বিশেষ করে জাল রুপি ছাপানো শুরু করেন। এখন পর্যন্ত এই চক্রের মাধ্যমে ৫ কোটির বেশি ভারতীয় জাল রুপি বাজারজাত হয়েছে।
লালবাগ বিভাগের ডিসি জানান, এই রুপি মূলত তারা সীমান্ত এলাকা থেকে স্মাগলিংয়ের কাজে ব্যবহার করতো। শাড়ি, মাদক বা বিভিন্ন সামগ্রী নেওয়ার সময় জাল রুপি দিয়ে পরিশোধ করা হতো অর্থ।
জাল টাকা তৈরির বিষয়ে উপ-কমিশনার বলেন, পলাতক আসামি মো. হুমায়ুন কবির রবিনকে কিছু জাল টাকা তৈরির কথা বলেন। এই জাল টাকা দিয়ে টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে আসার কথা ছিল সর্বশেষ। ওই পরিকল্পনা করতে গিয়েই অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তারা। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা এই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ওই মামলায় আজ দুপুরের দিকে তাদের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান ডিসি জাফর হোসেন।