নিজস্ব প্রতিবেদক:
মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলায় যুবলীগের কথিত নেতা ও আলোচিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের দশ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তার সাত সহযোগীর চার বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। আজ সোমবার (১৭ জুলাই) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডের পাশাপাশি আসামিদের ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৪ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। জরিমানার টাকা ৬০ দিনের মধ্যে পরিশোধ না করলে আরও এক বছরের কারাভোগ করতে হবে। চার বছর করে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মোরাদ হোসেন, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. শহীদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেন ও মো. আনিছুল ইসলাম।
এর আগে ১৫ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৫ জুন দিন ধার্য করেন। গত ২৫ জুন মামলার রায় ঘোষণা ও অধিকতর যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন আসামি পক্ষের আইনজীবী অধিকতর যুক্তি উপস্থাপন করেন। এরপর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম মামলার রায় ঘোষণা ১৭ জুলাই নতুন দিন ধার্য করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সাত সশস্ত্র দেহরক্ষীসহ জি কে শামীমকে তার কার্যালয় থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। নিকেতন এ-বøকের ৫ নম্বর রোডের ১৪৪ নম্বর বাড়িতে তার অফিসে র্যাব দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। তার কার্যালয় থেকে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরের ডলার, ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর, অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ জব্দ করা হয়।
এরপর জি কে শামীমের বিরুদ্ধে র্যাব বাদী হয়ে ৩টি মামলা করে। অস্ত্র আইনের মামলা নম্বর ২৮(০৯)১৯, মানি লন্ডারিং আইনের মামলা নম্বর ২৯(৯)১৯ ও মাদক আইনের মামলা নম্বর ৩০(৯)১৯।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সাঈদ তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৪ আগস্ট আদালতে জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, শামীম তার দেহরক্ষীদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে নিজ নামে লাইসেন্স করা অস্ত্র প্রকাশ্যে বহন, প্রদর্শন ও ব্যবহার করে লোকজনের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে আসছিলেন। বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসাসহ স্থানীয় টার্মিনাল, গরুর হাট-বাজারে চাঁদাবাজি করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, জি কে শামীম ও তার পরিবার বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে মজুত রেখেছে। এছাড়া আসামি যেকোনো সময় মজুত করা অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রক্রিয়া নিতে পারে। মামলার সুষ্ঠু-তদন্তের স্বার্থে অপরাধলব্ধ আয় সংক্রান্ত ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। আসামির অপরাধলব্ধ আয় অবরুদ্ধ না হলে ব্যাংক হিসাবে জমা করা অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে আইনের উদ্দেশ্যে ব্যাহত হতে পারে। ওই হিসাবগুলোতে কয়েকশ’ কোটি টাকা রয়েছে বলে জানা যায়।