সেলিনা আক্তার:
চলতি বছরের জুনে মূল্যস্ফীতি সামান্য কিছুটা কমেছে। এ মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর আগের মাসে, অর্থাৎ মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।
গত জুন মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২২ সালে জুন মাসে একজন মানুষ যে পণ্য ও সেবা ১০০ টাকায় কিনতেন, চলতি বছরের জুন মাসে একই পণ্য কিনতে তার খরচ হয়েছে ১০৯ টাকা ৭৪ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খরচ বেড়েছে ৯ টাকা ৭৪ পয়সা। মূল্যস্ফীতি হলো একধরনের করের মতো, যা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ বাড়ায়।
আজ সোমবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, জুন সমাপ্ত ২০২৩ অর্থ বছরের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ০২ শতাংশ। যা আগের বছর ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।
অবশ্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণায় গত অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতি মাত্র ৫ দশমিক ৬০ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি মূল্যস্ফীতিকে বাগে রাখতে পারেননি।
তাই মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা জনগণকে একটু শান্তি দিতে অর্থমন্ত্রী আবারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন। গত ২৬ জুন পাস হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের তার মূল লক্ষ্যই প্রবৃদ্ধির চাকাকে সচল রেখে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। পাস হওয়া বাজেটে তিনি মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনবেন বলে জানিয়েছেন। যদিও অর্থবছর শুরু করেছেন পৌনে ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে।
সোমবার বিবিএস প্রকাশিত পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত মাসের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমাতে সাহায্য করেছে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি। যদিও এ সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মে’র তুলনায় জুনে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ থেকে কমে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমেছে।
অন্য এক হিসাবে দেখা যায়, গত মাসে গ্রামের মূল্যস্ফীতি তেমন না কমলেও শহরে মূল্যস্ফীতি কমেছে। জুন শেষে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা মে’র শেষে ছিল ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। যেখানে শহরের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ থেকে কমে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমেছে।
বিবিএসের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা আগের মাসেও ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। শহরেও এ হার বেড়েছে, তবে তুলনামূলক কম। ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।
জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানাচ্ছে, গত বছর সবচে বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে। গত বছরের জুনে যেখানে স্বাস্থ্য খাতের মূল্যস্ফীতি ছিল ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, তা বছর ব্যবধানে ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
স্বাস্থ্যের পর সর্বাধিক মূল্যস্ফীতি ছিল অবকাশ যাপন ও বিনোদন গ্রহণে, এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ছিল পৌনে ৩ শতাংশ। এছাড়া আসবাবপত্র, গৃহস্থালি পণ্য এবং ঘরবাড়ি সংস্কারের ক্ষেত্রে খরচ বেড়েছে সোয়া ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
বিবিএস জানায়, গত জুন শেষে গত বছরের তুলনায় বাসা ভাড়া, পানি, বিদ্যুৎ গ্যাস এবং অন্যান্য জ্বালানির খরচ মেটাতে বেশি খরচ করতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ, যা এক বছর আগে ছিল ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। সবচেয়ে কম মূল্যস্ফীতি ছিল পোশাক ক্রয়ে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ।