জুমার নামাজ ঘিরে বাড়তি সতর্কতা

প্রকাশিত: ২:৫৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২৪

সতর্ক অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (ফাইল ছবি)

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতাপর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা কারফিউয়ের মধ্যে শুক্রবারের (২৬ জুলাই) জুমার নামাজকে ঘিরে সতর্ক রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আজ জুমার নামাজের পর আন্দোলনকারীরা রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলসহ নাশকতা করতে পারে শঙ্কা রয়েছে। এজন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মসজিদগুলোর আশেপাশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্বশীল একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আজ জুমার নামাজের সময় বায়তুল মোকাররম এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নামাজের কথা বলে দুস্কৃতিকারীরা সেখানে জড়ো হতে পারে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। কোটা আন্দোলনের নামে আর কাউকে রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না। কেউ রাস্তায় অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করলেই শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহের শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকারম এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় বিক্ষোভ হয়। তবে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের চেয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছিল বেশি। এজন্য এই শুক্রবারও জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ বা ঝটিকা মিছিল হতে করতে পারে শঙ্কা করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, দুস্কৃতিকারীরা জুমার নামাজ পড়ার নাম করে এক হতে পারে। এজন্য শুধু বায়তুল মোকারম নয়, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বড় বড় মসজিদগুলোর আশেপাশে পুলিশ মোতায়েনসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহের আন্দোলনে রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের দমন ও নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। এজন্য ঢাকার বাইরে যেসব জেলায় তুলনামূলক অস্থিরতা কম হয়, সেসব জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঢাকায় এনে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় যারা ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ছিলেন ভিডিও দেখে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রতিদিন রাতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চালানো হচ্ছে অভিযান। উসকানিদাতা হিসেবে ইতোমধ্যেই অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা ইতোমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় যারা অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদের অনেককেই চিহ্নিত করেছেন। তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়া বাড্ডা এলাকায় একজন ব্যবসায়ী আন্দোলনকারীদের অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন বলে তথ্য পেয়েছেন। তাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। একইসঙ্গে যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, উত্তরা ও মোহাম্মদপুর এলাকায় যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চলমান বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয় গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই)। এরপর টানা দুই দিন সারা দেশে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষের প্রাণ গিয়েছে। আহত হয়েছে সহস্রাধিক ব্যক্তি। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মারা গেছেন তিন পুলিশ সদস্য। পুলিশেরও শতাধিক সদস্য আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক এই সহিংস ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দেড় শতাধিক মামলা দায়েরের পাশাপাশি দুই সহস্রাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাও রয়েছেন। সূত্র – বাংলাট্রিবিউন।