জেটিতে খরচ দেড় কোটি টাকা, তবু উঠতে হয় কাদা মাড়িয়ে

প্রকাশিত: ১২:০১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

পলিমাটি জমায় এক বছর আগে খনন করা হয়েছিল কক্সবাজারের মহেশখালী জেটিঘাটে। বছর না যেতে আবারও তা ভরাট হয়ে গেছে। এতে ভাটার সময় স্পিডবোট ও যাত্রীবাহী নৌকা থেকে নেমে কাদা মাড়িয়ে জেটিতে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের।

মহেশখালী থেকে নৌপথে কক্সবাজারে যাতায়াতের ক্ষেত্রে যাত্রীদের একই ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অপর প্রান্তেও। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভাটার সময় নদী থেকে কাঠের নৌকা কিংবা স্পিডবোট সরাসরি কক্সবাজারের ৬ নম্বর জেটিঘাটে ভিড়তে পারছে না। বিকল্প হিসেবে শহরের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট দিয়ে যাত্রীদের আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। অথচ এই দুটি জেটিঘাট এলাকায় গত বছর খননে (ড্রেজিং) ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।

বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে এ দুটি ঘাটের পাশাপাশি খনন করতে হবে মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরসংলগ্ন জেটিঘাটেও। এতে খরচ হবে প্রায় তিন কোটি টাকা। সম্প্রতি নিয়মিত খননকাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জেটির দুপাশে দিন দিন ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভাটার সময় নৌযানে ওঠানামা করতে গিয়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছিল। এছাড়া বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছিলেন তারা।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভাটার সময় মহেশখালী নৌপথে চলাচলকারী নৌযানগুলো কক্সবাজারের ৬ নম্বর জেটিঘাটে ভিড়তে পারছে না। এ কারণে ভাটার সময় নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট দিয়ে এসব নৌযান যাতায়াত করছে। ভাটার সময় মহেশখালী জেটিঘাটে গিয়েও যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়। কাঠের নৌকা ও স্পিডবোট থেকে নেমে ডিঙি নৌকায় করে যাত্রীদের জেটিঘাটে উঠতে হচ্ছিল।

অন্যদিকে, আদিনাথ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, জেটিঘাট থেকে নেমে অনেকটাই কাদামাটির সঙ্গে লেপ্টে থাকা ভাঙা সাঁকোর ওপর দিয়ে যাত্রীরা নৌযানে ওঠানামা করছেন। এতে পর্যটকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছিল।

আদিনাথ জেটিতে পর্যটক কামাল উদ্দিন বলেন, স্পিডবোট যখন থেমেছে তখন কোনো ঘাট চোখে পড়ছিল না। অনেকক্ষণ পর খেয়াল করি, আনুমানিক ৩০০ মিটার দূরে একটি জেটি। পরে সাঁকো বেয়ে সেই জেটিতে উঠলাম।

পর্যটক মিনহাজুল আবেদীন বলেন, এই এলাকার মানুষ এত কষ্ট করে যাতায়াত করে, তা আগে জানা ছিল না। বলতে গেলে তারা প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন। তিনি আরও বলেন, পর্যটকেরা কক্সবাজার বেড়াতে এলেই মহেশখালী ঘুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। পর্যটনের কথা মাথায় রাখলেও জেটিঘাটের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার কথা।

মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের তাজিয়াকাটার বাসিন্দা আশেক ইলাহি ও নুর মোহাম্মদ বলেন, জেটি থেকে প্রতি বছর সরকার কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করছে; কিন্তু যাত্রীদের পাশাপাশি পর্যটকদের সুবিধার্থে জেটি সম্প্রসারণ বা খাল খনন করার ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা দেখা যায় না। একটি স্পিডবোটের চালক মোস্তফা কামাল বলেন, ছয় মাস আগেও ভাটার সময় জেটি থেকে সরাসরি যাত্রীদের ওঠানামা করা সম্ভব হতো। এখন নৌযান জেটিতে ভেড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে কাঠের জেটি নির্মাণ করে তা দিয়ে যাত্রীরা ওঠানামা করছেন। আদিনাথ ঘাটের অবস্থা আরও করুণ।

মহেশখালী স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি আতাউল্লাহ বোখারী বলেন, শীত মৌসুম ঘিরে এখন মহেশখালীতে দেশি-বিদেশি পর্যটক বেড়েছে। দিনে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ জেটিঘাট দিয়ে যাতায়াত করছেন। এর মধ্যে পর্যটক থাকেন পাঁচ শতাধিক। জেটিঘাট এলাকা ভরাট হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা এস এম রুবেল বলেন, জেটিঘাট ভরাট হয়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। দ্রুত খননকাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে বিআইডব্লিউ কর্তৃপক্ষকে আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। তবে খননকাজ চলে খুবই ধীরগতিতে।

বিআইডব্লিউটিএর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজা খন্দকার বলেন, প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছর মহেশখালী জেটিসংলগ্ন ৮০০ মিটার এবং কক্সবাজার ৬ নম্বর ঘাটসংলগ্ন বাঁকখালী চ্যানেলের ১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার খনন করা হয়েছিল। তবে এরপর বন্যার কারণে আবারও পলিমাটি জমে গেছে। এ বছর অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করতে হবে, যাতে তিন কোটি টাকা খরচ হবে। তিনি বলেন, নিজস্ব ড্রেজারে খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাই দরপত্র আহ্বান করার প্রয়োজন হয়নি।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ বনি আমিন বলেন, নতুন জেটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এই দ্বীপের বাসিন্দাদের নৌপথে যাতায়াতের ভোগান্তি আর থাকবে না। ইতিমধ্যে নতুন জেটির কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও যথাসময়ে শেষ হবে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ বলেন, যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে ভরাট হওয়া জেটিঘাটে খননকাজ দ্রুত শেষ করতে বিআইডব্লিউটিএকে বলা হয়েছে। নতুন জেটি নির্মাণের কাজও চলছে।