ডেস্ক রিপোর্ট :
নিবন্ধিত ৪৪ রাজনৈতিক দলের ১৮টি আগামী নির্বাচনের তপশিলকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রত্যাখ্যান করেছে ১৬টি। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) ১০টি অবস্থান স্পষ্ট করেনি। তবে এর অধিকাংশ নির্বাচনের পথে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের চিঠির পর সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত কয়েকটি দলও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংলাপ চায়।
দলগুলোর সঙ্গে আলাপে এবং তাদের বিবৃতিতে এ তথ্য জানা গেছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামা বিএনপির সমমনা দলগুলোর একটি বাদে সবগুলো তপশিল প্রত্যাখ্যান করেছে। এগুলো হলো– এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এনডিএম, মুসলিম লীগ। যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামী তপশিল প্রত্যাখ্যান করে হরতালের ডাক দিয়েছে।
বাম জোটের নিবন্ধিত দল সিপিবি, বাসদ এবং বাংলাদেশ জাসদ তপশিল প্রত্যাখ্যান করে গতকাল বৃহস্পতিবার হরতাল পালন করেছে। বিএনপির সঙ্গে না থাকলেও চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও তপশিল প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটি তপশিলের বিরোধিতায় গণমিছিল ও বিক্ষোভ করেছে। যদিও সরকারের সঙ্গে দলটির সমঝোতার গুঞ্জন রয়েছে। তবে ইসলামী আন্দোলন নেতারা জোরের সঙ্গেই বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবেন না তারা।
ছয় দল মিলে গঠন করেছে সমমনা ইসলামী জোট। এই জোটে চারটি দল নিবন্ধিত। এর মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং খেলাফত মজলিস তপশিল প্রত্যাখ্যান করেছে। জোটটি আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ করবে। এই তিনটি দলই এক সময়ে বিএনপির জোটে ছিল।
কোনো জোটে বা আন্দোলনে না থাকলেও ইনসানিয়াত বিপ্লব পার্টিও তপশিল প্রত্যাখ্যান করেছে। তপশিল বর্জন করা ১৬টি দল কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে। সমমনা ছয়দলীয় ইসলামী জোট ‘সরকার সমর্থিত’ বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে জমিয়তের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। একই কথা বলেছেন, ইনসানিয়াত বিপ্লব পার্টির চেয়ারম্যান ইমাম আবু হায়াত। বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল এবং ইসলামী আন্দোলন ও বাম জোটের শরিকরা আগে থেকেই এ কথা বলে আসছে। এ দলগুলো সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির পর সব দলের অংশগ্রহণে ভোট চায়।
তপশিলকে স্বাগত জানানো ১৮টি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোটে রয়েছে– জেপি, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাসদ ও তরীকত ফেডারেশন। নির্ধারিত সময়ে ও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের মতো অনড় থাকা এ দলগুলো সংলাপের বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগের জোটের বাইরে থাকা সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত জাকের পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, এনপিপি, বিএনএফও তপশিলকে স্বাগত জানিয়েছে। এ দলগুলোও নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। তপশিলকে স্বাগত জানালেও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটসহ কয়েকটি দল সংলাপ চায়।
আগের নির্বাচনে বিএনপির জোটে ছিল আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। এবার দলটি অবস্থান বদল করে তপশিলকে স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপির সাবেক নেতাদের নিয়ে গড়া তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনএম ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই দুই দলও তপশিলকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছে। সংলাপের বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। বিএনপি নেতাদের ‘ভাগিয়ে’ নির্বাচনে আনতে এই দুই দল গড়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সংলাপে ৪৪ দলের ২৬টি সাড়া দিয়েছিল। বর্জন করা ১৮ দলের ১৬টি তপশিল প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসির সংলাপ বর্জন করা বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ তপশিল নিয়ে ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। বিএনপি সমমনা ১২ দলীয় জোটের শরিক মুসলিম লীগ (বিএমএল) তপশিলকে স্বাগত না জানালেও নির্বাচনের অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর চিঠি পাওয়া জাপা সংলাপের প্রশ্নে সরব। প্রায় সব বিষয়ে সরকারের সুরে কথা বলে ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ তকমা পাওয়া দলটি তপশিলকে স্বাগত জানায়নি, আবার বর্জনও করেনি। নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাও পরিষ্কার করে বলছে না। জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের সংলাপের উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে অনুরোধ করলেও সাড়া পাননি। জাপা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জাপা সূত্রের খবর, নানা বাধ্যবাধকতার কারণে দলটিকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তবে এ সিদ্ধান্ত এখনই ঘোষণা করা হবে না। নির্বাচনে অংশ নিলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হবে কিনা তা যাচাই করছে দলটি। জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, তিনি এখনও আশাবাদী সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে।
তপশিলের ব্যাপারে নীরব থাকা বাকি দলগুলোর মধ্যে খেলাফত আন্দোলন সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এ দলটি ছয়দলীয় সমমনা ইসলামী জোটের শরিক। খেলাফত আন্দোলন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জোটের আন্দোলন থেকে পিঠটান দিয়েছে। গণফোরাম ২০১৮ সালে বিএনপির সঙ্গে থাকলেও এবার অবস্থান স্পষ্ট নয়। গণফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ কংগ্রেস জানিয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি জানিয়েছে, অংশগ্রহণমূলক হলে নির্বাচনে যাবে। এ দলটির প্রধান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ সরকারের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত।
রাজপথে সক্রিয় দলগুলোকে পেছনে ফেলে নিবন্ধন পেয়ে আলোচনায় আসা বিএসপির অবস্থানও স্পষ্ট নয়। সরকারের সমর্থক এবং সরকারি সংস্থার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই দলটির নেতৃত্বাধীন লিবারেল ইসলামিক জোট শুধু সংলাপ নয়, বিএনপি নেতাদের মুক্তি এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনও চাইছে! দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের বিকল্প নেই। বিএনপি নেতাদের জেলে রেখে নির্বাচন থেকে দূরে রাখাও সমাধান নয়।