জৌলুস ফিরলেও অরক্ষিত শিলাইদহের কাচারি বাড়ি

প্রকাশিত: ৩:১৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২৪

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়ির পাশাপাশি রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য আরেকটি মর্যাদাপূর্ণ স্থাপনা খাজনা আদায়ের কাচারি বাড়ি। ঐতিহ্যগতভাবে এই কাচারি বাড়িটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করলেও অযতœ-অবহেলায় যুগের যুগের তা ছিল অবহেলিত ও ভগ্নদশায়। সম্প্রতি সরকারি অর্থায়নে জরাজীর্ণ কাচারি বাড়িটি সংস্কারের পর জৌলুস ফিরে পেলেও তা এখনো অরক্ষিত। এতে ভ্রমণপিপাসু ও রবীন্দ্র অনুরাগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, জমিদারী পরিচালনায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ সালে এসেছিলেন পদ্মা-গড়াই চুম্বিত নিভৃত পল্লী শিলাইদহে। এখনে আসার পর প্রজাদের কাছ থকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে তৎকালে পদ্মার নদীর অদূরে তিনি স্থাপন করেছিলেন কাচারি বাড়ি। ১৯০১ সাল পর্যন্ত তিনি শিলাইদহে বসে জমিদারী পরিচালনা করেন। ছয় কক্ষবিশিষ্ট দ্বিতল ভবনের এই কাচারি বাড়ির নির্মাণ শৈলী মনোমুগ্ধকর ও দৃষ্টিনন্দন। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারী এস্টেট পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে শিলাইদহ ত্যাগের পর থেকে কাচারি বাড়িটি অযতœ-অবহেলার শিকার হয়। কালক্রমে বাড়িটি পরিণত হয় ভগ্ন দশায়।
সম্প্রতি প্রায় কোটি টাকা সরকারী অর্থায়নে কাচারি বাড়ির অবকাঠামোগত সংস্কারসহ লালচে রং ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এতে জৌলুস ফিরে পেলেও কাচারি বাড়িটি এখনো অরক্ষিত। এছাড়া সুরক্ষা প্রাচীর নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ ও জনবল পদায়ন না হওয়ায় কাচারি বাড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে না। পুরো কার্যক্রম বাস্তবায়ন না হওয়ায় কাচারি বাড়িতে এখন বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা ও ভুতুড়ে এক পরিবেশ। এতে কাচারি বাড়ির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। পাশাপাশি কাচারি বাড়ির কয়েক বিঘা খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু ওই সম্পত্তি এখনো কাচারি বাড়ির অনুকূলে হস্তান্তর করেনি কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।

রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির প্রায় কোয়াটার কিলোমিটার দূরত্বে কাচারিবাড়ি। দক্ষিণমুখী দ্বিতল এই ভবনটির পূর্ব-পশ্চিমে দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট ও প্রস্থ ২৯ ফুট। এছাড়া নীচতলা ও দোতলার সমানে ৮ ফুট ৬ ইঞ্চি চওড়া দুটি বারান্দা রয়েছে। শাল কাঠের চওড়া বর্গার উপর ঠালি ও চুন-সুড়কির সমন্বয়ে নির্মিত ভবনের ছাদ। দোতলায় উঠা-নামাতে ভবনের শেষ প্রান্তের পশ্চিমকোণে রয়েছে ঘোরানো-প্যাঁচানো লোহার সিঁড়ি। ভবনের সামনে রয়েছে ১১ জোড়া থাম বা পিলার।
প্রায় কোটি ব্যয়ে পুরো ভবনের ছাদ নতুনভাবে নির্মাণ ও সংস্কারসহ লালচে রংয়ের আঁচড়ে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কাচারি বাড়ি। সংস্কারে ২২/২৩ অর্থ বছরে ৩২ লাখ ও ২৩/২৪ অর্থ বছরে ৬১ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৯২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান কুঠিবাড়ি কাস্টোডিয়ান মো. আল আমিন।

স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্র নাথ জানান, প্রাচীর নির্মাণ অভাবে কাচারি বাড়ির আঙ্গিনা এখন উন্মুক্ত। ফলে প্রতিদিন এখানে বসে মাদকাসক্ত ও বখাটেদের আড্ডা। সত্বর প্রাচীর নির্মাণ ও জনবল পদায়নসহ কাচারি বাড়িটি রবীন্দ্র ভক্ত ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য উন্মুক্তকরণ দাবী করেন তারা।

কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান মো. আল- আমিন আরও জানান, প্রথম ধাপের বরাদ্দ অর্থে শুধুমাত্র কাচারি বাড়িটি পুরোপুরি সংস্কার সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাচীর নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ এখনো পাওয়া যায়নি। অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রাচীর নির্মাণসহ কাচারি বাড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।