ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব গন্তব্যের ফ্লাইটের সময়সূচি এলোমেলো হয়ে পড়ছে। গত দুই সপ্তাহে শতাধিক ফ্লাইটের যাত্রা বিলম্বিত হয়েছে। এগুলো মূলত ছিল রাত ৩টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে।
ঘন কুয়াশার প্রভাবে দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে। বিমান যোগাযোগে নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক প্রায় সব মানদণ্ড মেনে চলা হয়। এ জন্য সামান্য ঝুঁকি থাকলেই বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্যবস্থাপনা এবং উন্নত যন্ত্রপাতি থাকলে নৌ যোগাযোগও চালু রাখা সম্ভব। কিন্তু এর অভাবে দেশে সরকারি ফেরি ও নৌযান কুয়াশা হলেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। বেসরকারি মালিকানায় থাকা নৌযান ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনায় পড়ছে। গত রোববার রাতে চাঁদপুরের মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে দুজনের প্রাণহানি হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতেও চাঁদপুরের আলুর বাজারের কাছে মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ছয়জন আহত হয়।
দেশের মোট যাত্রীর ৮৮ শতাংশ সড়কপথে যাতায়াত করে। ৮০ শতাংশ মালামাল পরিবহন হয় সড়কপথে। ফলে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রাখা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সবচেয়ে ব্যস্ত এ যোগাযোগব্যবস্থায় কুয়াশার বিপদ এড়ানোর তেমন কোনো ব্যবস্থাই নেই। এ কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটছে। অন্যদিকে রেলে কুয়াশার ঝুঁকি এড়ানোর ব্যবস্থা আছে। তবে তদারকির অভাবে তা পুরোপুরি মেনে চলা হয় না। ফলে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার কুয়াশা বেশি। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে গত ৩০ বছরের দৈনিক তাপমাত্রা ও কুয়াশার ধরন পর্যবেক্ষণ করে একটি গবেষণা করছে আবহাওয়া সেবাবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা মার্স লিমিটেড। তারা বলছে, সাধারণত ঢাকা, বগুড়া, চট্টগ্রাম ও যশোরে ডিসেম্বরে গড়ে ২২ দিন মধ্যরাত থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত কুয়াশা থাকে। আর জানুয়ারিতে থাকে ২৩ দিন। এ বছর ডিসেম্বরে ২৩ দিন কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল। আর জানুয়ারির প্রথম ১৬ দিনের মধ্যে ১৩ দিনই কুয়াশাচ্ছন্ন থেকেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে ইটভাটা চালু হয় ও নির্মাণকাজ বেড়ে যায়। এতে বাতাসে বিপুল পরিমাণ সূক্ষ্ম বস্তুকণা জড়ো হয়। কুয়াশার সঙ্গে এগুলো মিশে তৈরি হচ্ছে ধোঁয়াশা। এ পরিস্থিতিতে বায়ুদূষণ যেমন বাড়ছে, তেমনি কমে আসছে দৃষ্টিসীমা। ঘন কুয়াশার এমন দিনগুলোতে বিমান, সড়ক, নৌ ও রেলপথের যাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘উন্নয়নকাজ বেড়ে যাওয়ায় ধুলাবালু বাড়ছে। ফলে কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, এটা সত্য। তাই আমরা অবৈধ ইটভাটাগুলো ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নির্মাণকাজ তদারককারী সংস্থাগুলোকে ধুলা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছি।’
সড়কে ঝুঁকির যাতায়াত
গত মাসের শেষের দিকে হাইওয়ে পুলিশ কুয়াশায় যান চলাচলের বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে। এতে বলা হয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা অনেকাংশে কমে আসছে। পথচারী ও বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না বলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় যানবাহনের চালকদের কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় ফগলাইট বা উজ্জ্বল আলোর বাতি ব্যবহার ও গতিসীমা সীমিত রেখে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
হাইওয়ে পুলিশ এই নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব সেরেছে। কুয়াশা হলে কত কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলবে, এর কোনো নির্দেশনা নেই। এ ছাড়া নির্ধারিত গতিসীমা না মানলে চালক যে শাস্তি পাবেন, সেটাও নিশ্চিত করার কার্যকর ব্যবস্থা নেই। ফলে কুয়াশায় অতিরিক্ত গতিতে যান চালিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে যানবাহন। এ ছাড়া দেশের সড়ক-মহাসড়কে নেই প্রয়োজনীয় সাইন-সংকেত। নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অনেক যানের নেই ফগলাইট।
গত বুধবার সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বালুর ট্রাকে চলন্ত বাস ধাক্কা দেয়। এ সময় দুর্ঘটনাকবলিত বাসটিকে আরও তিনটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। আহত হয় অন্তত ৩০ জন। পুলিশের ভাষ্য, ঘন কুয়াশার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ৬ জানুয়ারি ভোরে ফরিদপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়। ২০১৬ সালের ৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সেতুতে একটি বিরল দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথমে কুয়াশায় কারণে একটি ট্রাককে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি যাত্রীবাহী বাস। তার পেছনে ধাক্কা দেয় আরেকটি যান। এভাবে একে একে ২০ থেকে ২৫টি ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস ও ট্রাক একটি আরেকটির ওপর আছড়ে পড়ে।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের স্বত্বাধিকারী ফারুক তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কুয়াশা কোনো জায়গায় ঘন আর কোথাও পাতলা, তা আগে থেকে জানার ব্যবস্থা নেই। সড়কে তাই ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয়। কুয়াশায় দেখা না গেলে বাস থামিয়ে দেওয়ার বিষয়ে চালককে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু কোথাও বাস থামিয়ে রাখাও বিপজ্জনক, পেছন থেকে অন্য যান এসে ধাক্কা দিতে পারে। তাঁরা এখন বাসের পেছনে এলইডি বাতি লাগাচ্ছেন, যা উজ্জ্বল আলো দেয়। কিন্তু সব যানে এই আলো না থাকলে তো দুর্ঘটনা এড়ানো কঠিন। এ ছাড়া নছিমন-করিমনসহ ছোট যানের তো আলোরই ব্যবস্থা নেই।
দেশের সড়ক-মহাসড়কে ঘন কুয়াশার মধ্যেও দেখা যায় এমন চিহ্ন-সংকেত না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক আছে ৮ হাজার ৮৬০ কিলোমিটার। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নিজস্ব জরিপ বলছে, এর মধ্যে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার সড়কে যথাযথ সাইন-সংকেত নেই। কোথাও কোথাও থাকলেও তা ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ ৬২ শতাংশ সড়কে যথাযথ সাইন-সংকেত নেই। এটি দুর্ঘটনার মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে জানিয়ে সড়ক উন্নয়নে ৬৩২ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে সওজ।
বৃষ্টি, কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতি—এই তিন পরিস্থিতিতে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পায় জানিয়ে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিদেশে সাধারণত কুয়াশা বা তুষার পড়লে গতি কত কমাতে হবে, তা সড়কের পাশে থাকা বোর্ডে দেখানো হয়। বাংলাদেশে এই ব্যবস্থা নেই। হাইওয়ে পুলিশ গতি কমাতে বলে। কিন্তু তাদের এই বার্তা চালকদের কাছে কতটা যায়, সেটা কেউ বলতে পারবে না। একটাই পথ আছে, চালকের সতর্কতা। তিনি বলেন, কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা যতটুকু যায়, ততটুকুর মধ্যে চাইলে থামানো যাবে—এমন গতিতেই যানবাহন চালানো উচিত। এ ছাড়া কুয়াশার সময় সড়কের মাঝবরাবর চলতে হয়। কোনোভাবেই একটিকে আরেকটি পেরিয়ে যাওয়া (ওভারটেক) উচিত নয়। এগুলো মানা হয় না।
রেলে ব্যবস্থা আছে, দরকার তদারকি
গত ১২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা স্টেশনে দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত চালকেরা ঘন কুয়াশার কারণে সংকেতবাতি দেখতে পাননি বলে দাবি করেছিলেন। অবশ্য এ ঘটনায় গঠিত রেলের একাধিক তদন্ত কমিটি চালকদেরই দায়ী করেছে। পাশাপাশি কুয়াশার সময় ট্রেন চলাচলের বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেয়।
২০ নভেম্বর কুয়াশায় করণীয় সম্পর্কে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ চালক, স্টেশনমাস্টার ও গার্ডদের ১১টি নির্দেশনা দেয়। এর বাইরে রাতে দুই দিক থেকে আসা ট্রেনের মুখোমুখি ক্রসিং পরিহার করার কথা বলা হয়েছে। তবে রেলে এখন যেসব সংকেতবাতি আছে, এর অনেকগুলোর আলো অনুজ্জ্বল বলে চালকেরা অভিযোগ করছেন। প্রখর রোধ কিংবা ঘন কুয়াশায় এসব বাতি ভালো দেখা যায় না।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, স্টেশনমাস্টার কুয়াশার ঝুঁকি বিবেচনা করলে ‘ফগ সিগন্যাল’-এর ব্যবস্থা করবেন। তা না হলে চালক সংকেতবাতি দেখতে পাবেন না। এ সমস্যা এড়াতে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় শব্দ তৈরি করে ফগ সিগন্যাল নামের একধরনের বিস্ফোরক বস্তু রাখা হয় প্রতিটি রেলস্টেশনে। নিয়মটা হচ্ছে, ঘন কুয়াশার সময় স্টেশনমাস্টার তাঁর অধীন কর্মীকে দিয়ে স্টেশনের বাইরে থাকা সংকেতবাতির আগে দুই জায়গায় রেললাইনের ওপর এই ফগ সিগন্যাল স্থাপন করাবেন। ট্রেন চলার সময় চাকার ঘর্ষণে ফগ সিগন্যাল শব্দ তৈরি করবে। এরপরই চালক টের পেয়ে ট্রেনের গতি কমিয়ে সংকেত দেখে চলবেন।
রেলের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এই ব্যবস্থা পুরোটাই কর্মীদের আন্তরিকতার ওপর নির্ভর করে। স্টেশনমাস্টারদের প্রতিবছরই ফগ সিগন্যাল দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা এর ব্যবহার খুব কমই করেন। অনেক সময় ব্যবহার হয়েছে দেখানোর জন্য অপ্রয়োজনীয় সময়ে তা ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্বাঞ্চল) মো. নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কমে গিয়ে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি। ট্রেনের চালকেরা যদি ঘন কুয়াশার কারণে দেখতে না পান, সে জন্য চালককে গতি কমিয়ে দেওয়া বা থামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’
বিমান ও নৌপথ
উড়োজাহাজের পাইলট ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ঘন কুয়াশার কারণে পাইলটের দৃষ্টিসীমা কমে এলেই বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই দৃষ্টিসীমা একেক দেশে একেক রকম হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান উড্ডয়নের জন্য সর্বনিম্ন দৃষ্টিসীমা ৪০০ মিটার। অবতরণের বেলায় তা ৮০০ মিটার। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সোম ও বুধবার রাতে ও ভোরে দৃষ্টিসীমা ১০০ মিটারের নিচে আসে। এরপরই ঢাকামুখী বিমান অন্যত্র নামার সংকেত দেওয়া হয়। আর ঢাকা থেকে কোনো বিমান উড্ডয়ন করেনি। গত দুই সপ্তাহে কয়েক শ ফ্লাইটের যাত্রা বিলম্বিত হয়েছে।
বাংলাদেশের নৌপথ অনেকটাই সরু। শীতকালে নাব্যতা কমে তা আরও সরু হয়ে যায়। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নদীর নাব্যতা কোথাও কম, কোথাও বেশি। ফলে ঘন কুয়াশা হলে সরকারনিয়ন্ত্রিত ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বেসরকারি লঞ্চ চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও তা মানা হয় না। ফলে দুর্ঘটনায় পড়ে।
গত রোববার রাতে মেঘনা নদীর মাঝের চর এলাকায় কীর্তনখোলা-১০ ও ফারহান-৯ নামের দুটি লঞ্চের সংঘর্ষে দুজন প্রাণ হারায়। ডিসেম্বরে চাঁদপুর-শরীয়তপুরের মধ্যে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ দুর্ঘটনায় একজন মারা যায়। এ ছাড়া চরে আটকে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। দেশের দুই ব্যস্ত ফেরিপথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি পথে শীতকালের রাত ও ভোরের বেশির ভাগ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এর মধ্যে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে এ মাসের প্রথম ১৬ দিনে ২০ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল বলে বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানিয়েছে। এই পথে ১৬টি ফেরি চলাচল করে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশে সব যাত্রীবাহী লঞ্চে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। ফলে এক লঞ্চের সঙ্গে অন্য লঞ্চ যোগাযোগ স্থাপন করে দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে পারে না। কুয়াশার মধ্যে গতি কমিয়ে ও মিনিটে মিনিটে হর্ন বাজিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নৌপথগুলোতে নাব্যতার সমস্যা আছে। ফলে স্বাভাবিক আবহাওয়াতেই আমাদের বড় নৌযানগুলো নদীতে চলাচল করতে সমস্যা হয়। যে কারণে কুয়াশা বেড়ে গেলে আমরা নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিই। পরিস্থিতি ভালো হলে তা আবার চালু করি।’
আবহাওয়া পরিস্থিতি
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ২৪ দিন দেশের কোথাও না কোথাও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়া এলাকাগুলোর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়। ১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরের দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর বাতাস দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছে যায়। যে সময় কুয়াশা বেশি থাকছে, সেই সময়টাতে বাতাসও বিষাক্ত হয়ে উঠছে।
প্রায় ৩০ বছর ধরে আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার। তিনি বলেন, ‘দেশে প্রাকৃতিক কারণে কুয়াশা বাড়লেও ধুলা ও ধোঁয়ায় তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। ফলে শীতকালে সব ধরনের পথে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে শীতকালে কুয়াশা থাকে, তুষারপাত হয়। এর মধ্যেও বিশেষ ব্যবস্থায় স্বাভাবিক কার্যক্রম চলে। তাই আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যানবাহনগুলোর জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা দিতে হবে। কুয়াশার মধ্যেও যাতে আমাদের যাতায়াতব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন থাকে, সেই বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে নীতি ও অবকাঠামোকে নতুন করে সাজাতে হবে।’