‘টাকা ছাড়া মূল্য নেই, আরচারি খেলে পেয়েছি অপমান-বঞ্চনা’

প্রকাশিত: ২:৩৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৫

ক্রীড়া ডেস্ক:

 

বাংলাদেশে যখন খবরটি চাউর হয়, যুক্তরাষ্ট্রে তখন রাতের শেষ অংশ। বৃহস্পতিবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে আরচার রোমান সানা দেখেন তাঁর মোবাইলে অসংখ্য ফোন ও খুদে বার্তা। এত ফোন ও বার্তা থেকে রোমানের বুঝতে বাকি নেই, তাঁর ও দিয়া সিদ্দিকীর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়ার খবরটি সবাই জেনে গেছে। দুই সেরা তীরন্দাজের এভাবে চলে যাওয়াতে গোটা ক্রীড়াঙ্গন বিস্মিত হলেও অনুতপ্ত নন রোমান।

স্ত্রী দিয়া সিদ্দিকীকে পাশে রেখে আমেরিকার নিউ জার্সি থেকে শুক্রবার রাতে হোয়াইটসঅ্যাপে সমকালের কাছে বাংলাদেশ ছাড়ার কারণ বলতে গিয়ে অভিমান আর ক্ষোভ ঝরেছে রোমানের কণ্ঠে, ‘সত্যি কথা বলতে কী বাংলাদেশে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় আমরা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। আর টাকা ছাড়া কোনো মূল্য নেই। আরচারি খেলে বাংলাদেশের জন্য যা কিছু করেছি, সেগুলো তো কেউ মনে রাখেনি। আপনি বলেন– এত পদক এনে দিলাম, সাফল্য এনে দেওয়ার পরও দিন শেষে কী পেয়েছি? কিছুই পাইনি। পেয়েছি অপমান, বঞ্চনা। লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি।’

২০২১ সালে বিশ্ব আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে রোমান-দিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন অসীম কুমার ও হাকিম আহমেদ রুবেল। সেই ভিসাতে রোমান-দিয়ার আগে আমেরিকায় চলে যান অসীম ও রুবেল।

যে আরচারির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পেরেছেন, তীর-ধনুকের সেই খেলাকে এখন অতীত মনে করছেন রোমান, ‘আমি আরচারি নিয়ে আর কোনো কথাই বলতে চাই না। আমার কাছে সেটা এখন অতীত। আমাকে এখন চিন্তা করতে হচ্ছে নতুন জীবন নিয়ে। কীভাবে জীবনটা সুন্দর হয়, সেটাই। নিজেকে কীভাবে গড়ে তুলব। নতুন এই পথচলাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলাই এখন আমার স্বপ্ন। স্বপ্ন পূরণের জন্যই আমরা এখানে এসেছি। আমাদের জন্য দোয়া কইরেন।’

আরচারিতে পরিচয়ের পর পরিণয় হয় রোমান ও দিয়ার। একসঙ্গে জুটি বেঁধে দেশকে অনেক পদক এনে দিয়েছিলেন তারা। যে কোচের ভালোবাসা ও আদর-স্নেহে আরচারির বড় তারকা হয়েছেন দেশ ছাড়ার সময় সেই মার্টিন ফ্রেডরিখকে যেমন বলেননি, তেমনি করে ফেডারেশনের কাউকে জানাননি তারা।

‘কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ থেকে শুরু করে কারও কাছেই আমরা বলে আসিনি। এখন কে কী ভাবল, মনে করল কিংবা লিখল, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমাদের কোনো কিছুই যায় আসে না। ফেডারেশনকে কেন বলতে যাব। তারা আমাদের কী দিয়েছে। বাংলাদেশে আরচারি খেলে কী পেয়েছি। ফেডারেশনই বা আমাদের জন্য কী করেছে। সেখানে কিছু নেই বলেই তো আমরা আজকে এখানে এসেছি’–ক্ষোভের সুরে বলেন রোমান।

গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর আমেরিকার নিউ জার্সিতে এক পরিচিতজনের বাসায় উঠেছেন রোমান ও দিয়া। বাংলাদেশে ফেরার আর কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানান রোমান। অলিম্পিকে খেলা রোমানের আরচারি ক্যারিয়ার পড়ন্ত বেলায় ঠেকলেও নারী তীরন্দাজ দিয়া সিদ্দিকীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ছিল।

এ প্রসঙ্গে আনতেই রোমানের পাল্টা যুক্তি, ‘না ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নেই আরচারিতে। দিন শেষে আপনার টাকাটাই সব। আপনার কাছে টাকা আছে আপনার মূল্য আছে। সবাই দাম দেবে। সম্মান করবে। টাকা না থাকলে আপনার পুরো জীবনটাই মূল্যহীন।’

আমেরিকায় পাড়ি জমানোয় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনও হয়তো ভুলে যাবে রোমান-দিয়া নামক দুটি নক্ষত্রের কথা। আর্থিক দীনতায় এভাবেই হারিয়ে যান তারকারা।