টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং: বাংলাদেশ নারী দলের যেখানে দরকার অনেক উন্নতি

প্রকাশিত: ৪:২৮ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২৪

খেলাধুলা ডেস্ক:

অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকেই বাংলাদেশ নারী দলের ব্যাটিংয়ের টপ অর্ডারের ব্যর্থতা ছিল আলোচনায়। ভারতের বিপক্ষে টপ অর্ডারে একটু উন্নতি হলেও সেই ১২০ রানের চক্রেই ঘুরপাক খাচ্ছে দল। মাঝের ওভারগুলোয় দ্রুত উইকেট হারিয়ে যে চাপ চলে আসছে, সেটি থেকে বেরিয়ে ১৪০-১৫০ রানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না নিগার সুলতানার দল।

বোলাররা লড়াইয়ের চেষ্টা করছেন বটে, কিন্তু যথেষ্ট পুঁজি তাঁদের এনে দিতে পারছেন না ব্যাটাররা। দলের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে হতাশা আর উদ্বেগের কথাও শোনা যাচ্ছে। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচের পর দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা রাবেয়া খান যেমন ভারতের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘তারা ফ্রি খেলতে পারছে। আমরা পারছি না।’ সেটা না পারার কারণ হিসেবে দ্রুত উইকেট পড়ে যাওয়ার চাপের কথাই বলা হচ্ছে।

উইকেট পড়ে গেলে মোমেন্টাম নষ্ট বা ছন্দপতন হয় ঠিকই; তবে ১২০ বলের ম্যাচে উইকেট হারানোর সে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া উচিত দ্রুতই। সেখানেই আসে সামর্থ্যের প্রশ্ন। পুরুষ দল বা নারী দল—এমনিতে টি-টোয়েন্টি ঠিক বাংলাদেশের পছন্দের সংস্করণ নয়। পাওয়ার হিটিং বলুন বা বাউন্ডারি মারার সামর্থ্য—অন্য দলগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ নারী দল বেশ পিছিয়ে। দলের পারফরম্যান্সে যা প্রভাব ফেলছে সরাসরি।

২০২৩ সালের শুরু থেকে আইসিসির পূর্ণ সদস্যদেশগুলো আগে ব্যাটিং করে যেসব ম্যাচ খেলেছে, সেখানে গড় স্কোর ১৪৫ রানের মতো। তবে বাংলাদেশ প্রায়ই পুড়ছে আরও ২০-৩০টি রান বেশি করতে না পারার আফসোসে।

ওভারপ্রতি রান তোলার কথাই যেমন ধরুন। ২০২৩ সালের শুরু থেকে বাংলাদেশ ২৪টি টি-টোয়েন্টি খেলে প্রতি ওভারে তুলেছে ৫.৪১ রান। এ সময়ে কমপক্ষে ১০টি ম্যাচ খেলেছে, এমন দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৬ নম্বরে। এখানে তাদের ওপরে আছে এবারই প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলতে আসা ভানুয়াতুর মতো দলও।

স্বাভাবিকভাবেই সহযোগী দেশগুলোর প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণ বিবেচনায় আনতে হবে। তবে আইসিসির পূর্ণ সদস্যদেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশই সবচেয়ে পিছিয়ে।
টি-টোয়েন্টিতে রান তুলতে বাউন্ডারি বড় একটা পার্থক্য গড়ে। ২০২৩ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ছক্কা মেরেছে ১৭টি, আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে তাদের চেয়ে পিছিয়ে শুধু নিউজিল্যান্ড। মেয়েদের ক্রিকেটে ছক্কার সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই পুরুষদের তুলনায় কম। কিন্তু চার মারার দিক থেকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে।

একই সময়ে বাংলাদেশ আইসিসির পূর্ণ সদস্যদেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম ২০৪টি চার মেরেছে, শীর্ষে থাকা অস্ট্রেলিয়া যেখানে মেরেছে এক ম্যাচ কম খেলেই ৪০৪টি চার। এ সিরিজে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত ২৫ ম্যাচে মেরেছে ৩২৭টি চার।
ফলে ব্যাটারদের গড় স্ট্রাইক রেটেও বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাটারদের গড় স্ট্রাইক রেট মাত্র ৮২.০৭। এ মুহূর্তে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলা শ্রীলঙ্কা-আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররাও যেখানে এ সময়ে ১০০-এর ওপর গড় স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন।

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের দুর্দশার ক্ষেত্রে দেশের মাটিতে উইকেটের ধরনের প্রসঙ্গ প্রায়ই সামনে চলে আসে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে মিরপুরের উইকেটগুলোও ছিল বেশ ব্যাটিং সহায়ক, যেটি বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা ব্যক্তিরাও স্বীকার করেছেন। একই অবস্থা সিলেটে ভারতের বিপক্ষে সিরিজেও।