
সেলিনা আক্তার:
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর বিশ্বের শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতন হয়েছিল। এশিয়া থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত সব জায়গায় শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছিল। এতে চরম টালমাটাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কখন কী সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন আর তার জেরে কি-না-কি ঘটবে, এই আতঙ্ক জেঁকে বসেছে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে।
তবে বুধবার বাংলাদেশ সময় রাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ব্যতীত সব দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এশিয়ার শেয়ারবাজার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলা হয়েছে, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শেয়ারবাজারে স্বস্তির বাতাস বাইছে। আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে বাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাপানের নিক্কি এশিয়া সূচকের ৮ শতাংশ উত্থান হয়েছে। গতকাল মার্কিন শেয়ারবাজারের যে উত্থান হয়েছে, তাকেও ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছে বিবিসি। সেই সঙ্গে এশিয়ার অন্যান্য সূচকের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচকের উত্থান হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ; সাংহাই কম্পোজিট সূচকের উত্থান হয়েছে ১ শতাংশ; হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচকের উত্থান হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ; তাইওয়ানের তাইয়েক্স সূচকের উত্থান হয়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ ও অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স সূচকের উত্থান হয়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এর আগে গতকাল এশিয়ার বাজারের সব সূচকই ছিল নিম্নমুখী।
শেয়ারবাজারের পাশাপাশি অন্যান্য বাজারেও ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছিল, তবে এখন তা বাড়ছে। সোনার দামও আজ বেড়েছে। আউন্সপ্রতি সোনার দাম বেড়েছে ২৯.৪৫ ডলার বা ০.৯৯ শতাংশ। তেলের দামেও কিছুটা বৃদ্ধি হয়েছে। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ১.৩৭ শতাংশ বেড়ে ৬৫.০৯ ডলারে পৌঁছেছে।
গতকাল চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং তার জেরে চীনের ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘটনায় বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসে। এরপর ট্রাম্প শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা দিলে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৫ ডলারে উঠে যায়, যদিও আজ সকালে দাম আবার কিছুটা কমে ৬৪ ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম এখন ব্যারেলপ্রতি ৬১ দশমিক ৮২ ডলার। তবে বাজারে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসার কারণেই তেলের দাম কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকেরা। খবর অয়েল প্রাইস ডট অর্গের।
এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসও মন্দার সম্ভাবনা হ্রাস করেছে, আগে যেখানে তারা বলেছিল যে মন্দার আশঙ্কা ৬৫ শতাংশ, সেখানে এখন তারা বলছে, মন্দার আশঙ্কা ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ তারা আগের অবস্থানে ফেরত গেছে। যদিও তারা বলছে, এখনো যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে সামগ্রিক শুল্ক হার ১৫ শতাংশ বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী স্কট বেসেন্টও ট্রাম্পের মতো বাজারের অস্থিরতা বা টালমাটাল পরিস্থিতির বিষয়টি একরকম উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প বলেছিলেন কেউ যেন প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ না করে, যারা তাঁর কথা রেখেছে, এই ৯০ দিন স্থগিত রাখার ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের উপকার হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মূলত আলোচনায় সর্বোচ্চ সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যই ট্রাম্প শুল্ককে একধরনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি শুরু থেকেই এই কৌশল অবলম্বন করে আসছেন। বা আপনারা বলতে পারেন, ট্রাম্প চীনকে বাজে পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছেন।