ট্রাম্পের হুমকির জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে কানাডা

প্রকাশিত: ১:৩৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কানাডা। খবর ডয়চে ভেলের।

অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচারের জন্য কানাডাকে দায়ী করে শুক্ল আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেইসঙ্গে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হিসেবে সংযুক্ত করারও কথা বলেন তিনি।

এ ছাড়া গতসপ্তাহে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ‘গ্রেট স্টেট অফ ক্যানাডার গভর্নর’ বলেও ঠাট্টা করেন ট্রাম্প। কিছু বিশ্লেষক ট্রাম্পের এসব বক্তব্যকে গুরুত্ব সহকারে না নিলেও কানাডার রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদেরা এর সমালোচনা করেছেন।

বিশেষ করে, নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্প যেহেতু চীন, মেক্সিকো, ব্রিকস ও ন্যাটোকে লক্ষ্য করে বক্তব্য দিলেও কানাডাকে নিয়ে খুব বেশি কিছু বলেননি তাই এখন তার এমন বক্তব্যে অনেকে অবাক হয়েছেন।

ব্যাংক অফ মনট্রিয়ালের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডগলাস পোর্টার ডিডাব্লিউকে বলেন, এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল।

ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যেও কানাডাকে শত্রু হিসেবে দেখার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব (ট্রাম্পের বক্তব্যসমূহ) আমার কাছে একটু বেশি বিরক্তিকর মনে হচ্ছে।

ট্রাম্পের উদ্যোগে ২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-ক্যানাডা চুক্তি (ইউএসএমসিএ) কার্যকর হয়েছিল। এখন তিনি বলছেন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও বাণিজ্যসহ এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়েছে কানাডা ও মেক্সিকো। আগামী বছর এই চুক্তি পর্যালোচনা করার কথা।

অর্থনীতি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইকনোমিক্সের কানাডা ইকনোমিক্সের পরিচালক টনি স্টিলো ডিডাব্লিউকে বলেন, আরও বেশি সুবিধা পেতে নিজের চুক্তিকেও বাতিল করার জন্য পরিচিত ট্রাম্প।

তিনি বলেছেন, নাফটা (উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি) চুক্তির বদলে ইউএসএমসিএ চুক্তি করতে ট্রাম্প সহায়তা করলেও এখন তিনি একে সবচেয়ে খারাপ চুক্তি বলছেন।

যুক্তরাষ্ট্র-ক্যানাডা বাণিজ্য সম্পর্ক

গত বছরের প্রথম ১১ মাসে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার কানাডা। মেক্সিকো, ইউরোপ ও চীনের চেয়েও সেখানে বেশি রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্র। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আছে ট্রাক, ভ্যান, গাড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও জীবাশ্ম জ্বালানি।

একইভাবে কানাডার রপ্তানি পণ্যেরও সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। তিন-চতুর্থাংশের বেশি রপ্তানি পণ্যই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। তুলনার জন্য বলা যায়, জার্মানির মোট রপ্তানি পণ্যের ৫৩ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া কানাডীয় পণ্যের এক-চতুর্থাংশ হলো অপরিশোধিত তেল। গত জুলাইতে এর পরিমাণ দিনে ৪৩ লাখ ব্যারেলে পৌঁছেছিল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।

যুক্তরাষ্ট্র এসব তেল পরিশোধিত করে গ্যাসোলিন, ডিজেল ও জেট ফুয়েল তৈরি করে। এসব জ্বালানি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কিছু অংশ কানাডায়ও রপ্তানি করা হয়।

ক্যানাডার তেলসমৃদ্ধ আলবার্টা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড্যানিয়েল স্মিথ বলেছেন, ট্রাম্প যদি কানাডীয় পণ্যে শুল্ক আরোপের হুমকিকে বাস্তবে পরিণত করেন তাহলে সেটি নিজের পায়ে গুলি করার মতো বিষয় হবে।

এক্স প্ল্যাটফর্মে তিনি লিখেছেন, প্রস্তাবিত শুল্ক তাৎক্ষণিকভাবে মার্কিন তেল রিফাইনারদের ক্ষতি করবে এবং ভোক্তাদের পাম্পগুলিতে আরও বেশি অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করবে।

কানাডার গণমাধ্যম বিএনএন ব্লুমবার্গ অর্থনীতিবিদদের উদ্ধৃত করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করলে কানাডার জিডিপি দুই থেকে চার শতাংশ কমতে পারে, এবং অর্থনীতিতে মন্দা তৈরি হতে পারে।

প্রস্তুত হচ্ছে কানাডা

যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করলে প্রতিশোধ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোন পণ্যে শুল্ক আরোপ করা যায় তার তালিকা তৈরি করছে কানাডা। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম আমলেও কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ শুরু হয়েছিল। এক বছর পর তার সমাধান হয়েছিল।

কানাডার দৈনিক গ্লোবাল অ্যান্ড মেইল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত, সিরামিক্স, কাচ, ফুল ও ফ্লরিডা কমলা জুসসহ আরও কিছু পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে কানাডা।