ট্রেনে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবার আকুতি
আল্লায় আমারে কঠিন পরীক্ষাত ফালছে
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
# বাড়িত আর যাইতাম না, মাইনষের প্রশ্নের উত্তরও দিতাম না
# অভিযুক্ত ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট আক্কাস গাজীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা
‘আল্লায় আমারে কঠিন পরীক্ষাত ফালছে। মিথ্যা মামলায় বাড়িছাড়া। ভুল কইরা ট্রেনে উইট্যা মাইয়াডার সর্বনাশ হইছে। ঘরে বিয়ার যোগ্য এক মাইয়া রইছে। দুই পোলা বড় অইছে। মাইনষের সামনে ক্যামনে মুখ দেহাইয়াম। মাইনষের কথার কী জবাব দিবাম। হের লাইগ্যা মাইয়াডারে লইয়্যা বাড়িত যাইতাম না।’ লালমনিরহাট থেকে মেয়েকে নিয়ে গাজীপুরের উদ্দেশে ফেরার পথে শুক্রবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে সমকালকে কথাগুলো বলেন লালমনি এক্সপ্রেসে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে নিজ বাড়ি ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য রেলস্টেশনে যায় কিশোরী (১৪)। ভুলবশত সে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে পড়ে। রাত আড়াইটার দিকে ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট আক্কাস গাজী তার টিকিট দেখতে আসেন। টিকিট না থাকায় আক্কাস গাজী তাকে একটি আসনে বসিয়ে দেন। এরপর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অ্যাটেনডেন্ট আসন থেকে তাকে কেবিনে এনে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। পরে টহলরত রেলওয়ে পুলিশের একটি দল কেবিন থেকে কিশোরীকে উদ্ধার ও আক্কাস গাজীকে (৩২) আটক করে। কিশোরীকে উদ্ধার করে লালমনিরহাটের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আক্কাস গাজী বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ এলাকার মৃত বজলু গাজীর ছেলে। এ ঘটনায় লালমনিরহাট রেলওয়ে পুলিশের এএসআই রুহুল আমিন বাদী হয়ে মামলা করার পর আক্কাসকে কারাগারে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার বিভাগীয় মামলাও করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত বুধবার আক্কাস গাজীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। দুই বছর ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে গাজীপুরের জয়দেবপুরে বসবাস করছিল সে। তার বাবা জয়দেবপুরে শ্রমিকের কাজ করেন। মা একটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মেসে রান্নার কাজ করেন। কিশোরীর বাবা একটি হত্যা মামলায় আট মাসের জেলজীবন শেষে অভাবের কারণে সন্তানদের নিয়ে গাজীপুরে যান। বড় মেয়েকে দিয়েছেন জুতা কারখানায় শ্রমিকের কাজে।
শুক্রবার বিকেলে ট্রেনে গাজীপুর ফিরছিলেন কিশোরীর বাবা। মোবাইল ফোনে তিনি জানান, গত মঙ্গলবার সকালে তিনি বাড়ির উদ্দেশে চলে আসেন। চলে আসার পর তার (কিশোরীর) মা তরকারি কেটে দিতে বলেছিল। কিন্তু সে (কিশোরী) সে কাজ করেনি। মা বকতে পারে এই ভয়ে সে (কিশোরী) ঈশ্বরগঞ্জ যাওয়ার জন্য ট্রেন ধরতে যায়। কিন্তু ভুল ট্রেনে উঠে পড়ে। তিনি বলেন, ঋণ মেটাতে পারমু, দৈনিক কামাই করে একটু ভালো চলতে পারমু– এই আশায় গাজীপুর আইছিলাম। কিন্তু আমার মাইয়াডার সর্বনাশ হইয়া গেছে।
নির্যাতিত কিশোরীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বাবা তার জানান, সে কথা বলার পর্যায়ে নেই। খুবই বিমর্ষ। কান্নাকাটি করে শুধু। আমি চাই আমার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে, তার কঠিন বিচার হোক।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় শুধু মেয়ের জীবনই নষ্ট হয় নাই, আমাদের সবাইরে আল্লায় পরীক্ষার মধ্যে ফেলছে। মাইনষের নানা প্রশ্নের মধ্যে পড়তে অইব। অনেকে মোবাইলে অনেক কথা জিগাইতাছে। তাই চিন্তা করছি বাড়িত আর যাইতাম না। মাইনষের প্রশ্নের উত্তরও দিতাম না।’