ডালিম সম্পর্কে কী বলা আছে পবিত্র কুরআনে

প্রকাশিত: ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

বাংলা ডালিম, বেদানা বা আনারের আরবি প্রতিশব্দ ‘রুম্মান’। ইংরেজিতে বলা হয় চড়সবমৎধহধঃব। বৈজ্ঞানিক নাম চঁহরপধ মৎধহধঃঁস। ডালিমের আদি নিবাস প্রাচীন পারস্য অঞ্চলে।

বাড়ির ছোট থেকে বড় সকলেরই পছন্দের খাবার এটি। দেশভেদে গোষ্ঠীভেদে ডালিমের নাম ভিন্ন হতে পারে তবে লাল টুকটুকে রুবি পাথরের মতো দানায় ঠাসা এই ফলকে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে সুপারফুড বলা হয়।

বিভিন্ন উপকারিতার কারণে মানুষ ফলটি খেয়ে থাকেন। এই ফলটির কথা পবিত্র কোরআনেরও বর্ণিত হয়েছে। কোরআনের তিন স্থানে রুম্মান বা ডালিম আলোচনা এসেছে। আল্লাহ তায়ালা জান্নাতবাসীদের যেসব ফলমুল খেতে দেবেন সেই তালিকায় ডালিম বা আনারের কথাও রয়েছে।

পবিত্র কোরআনের সূরা আর রাহমানের আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

فِیۡهِمَا فَاكِهَۃٌ وَّ نَخۡلٌ وَّ رُمَّانٌ

সেখানে রয়েছে ফলমূল—খেজুর ও আনার। (সূরা আর-রাহমান, আয়াত : ৬৮)

এছাড়াও পবিত্র কোরআনের আরেক স্থানে রুম্মান বা আনারের আলোচনা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَ جَنّٰتٍ مَّعۡرُوۡشٰتٍ وَّ غَیۡرَ مَعۡرُوۡشٰتٍ وَّ النَّخۡلَ وَ الزَّرۡعَ مُخۡتَلِفًا اُكُلُهٗ وَ الزَّیۡتُوۡنَ وَ الرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّ غَیۡرَ مُتَشَابِهٍ ؕ كُلُوۡا مِنۡ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثۡمَرَ وَ اٰتُوۡا حَقَّهٗ یَوۡمَ حَصَادِهٖ ۫ۖ وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ؕ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ

‘আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন বাগানসমূহ, যার কিছু মাচায় তোলা হয় আর কিছু তোলা হয় না এবং খেজুরগাছ ও শস্য, যার স্বাদ বিভিন্ন রকম, জয়তুন ও আনার (ডালিম), যার কিছু দেখতে এক রকম আর কিছু ভিন্ন রকম। তোমরা তার ফল থেকে আহার করো, যখন তা ফল দান করে এবং ফল কাটার দিনেই তার হক দিয়ে দাও আর অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা আনআম, আয়াত : ১৪১)

তাফসিরবিদদের মতে, এখানে ফলমূলের কথা উল্লেখ করে আলাদা করে আবার খেজুর, ডালিমের কথা উল্লেখ করার কারণ হলো খেজুর ফল ও খাবার, আর ডালিম হলো ফল ও ওষুধ। (কুরতুবি)

জান্নাতে শুধু ডালিম বা এখানে উল্লেখিত ফলগুলোই থাকবে না। এর থেকেও আরও অনেক বেশি প্রকারের ফলমূল থাকবে। যা মানুষের ধারণার বাইরে। চিরস্থায়ী জান্নাতে যেসব নেয়ামত রয়েছে তা মানুষের কল্পনার বাইরে। এ সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন বস্তু তৈরি করে রেখেছি যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি এবং কোন অন্তর যা কখনো চিন্তাও করেনি। এসব নেয়ামত আমি জমা রেখে দিয়েছি। তবে আল্লাহ তোমাদেরকে যা অবগত করিয়েছেন…। (মুসলিম শরিফ, ৬৮৭২)

এ ছাড়া ডালিম এমন একটি ফল যে এর খোসায়ও রয়েছে ঔষধি গুণ। আলী (রা.) বলেন, ‘তোমরা খোসাসহ ডালিম খাও। কেননা তা পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে। ’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৫/৯৯)

বর্তমান যুগের বিশেষজ্ঞদের মতেও ডালিম হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ডালিমে আছে ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশ। দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় দুই ধরনের আঁশ থাকায় এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের নড়াচড়া নিয়মিত করে।

এ ছাড়া ডালিমের খোসায় প্রচুর পরিমাণে এলার্জিক এসিড আছে, যা ত্বকের বলিরেখা দূর করে। অন্যদিকে এর ভিটামিন সি ত্বককে সুস্থ ও তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। আর এর জিংক ও কপার নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে, ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, ব্রণ দূর করে এবং ত্বক পরিষ্কার রাখে। এ কারণে অনেকে ডালিমের খোসা গুঁড়া করেও বাজারজাত করছে। তবে এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এমনকি কোনো বিশেষ উপকারিতা লাভের জন্য ডালিম খেতে চাইলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার নির্দিষ্ট পদ্ধতি জেনে নিতে হবে।