ডিবি’র সোর্স থেকে শহিদুল মাঝি নিজেই গড়ে তোলেন ভয়ঙ্কর ডাকাত দল

প্রকাশিত: ৬:২৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:
একসময় ছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সোর্স। সেই গোয়েন্টদা পুলিশের ফাঁদ পাতা থেকে অভিযানের সব কৌশলই ছিল তার জানা। সেই সুযোগটিই কাজে লাগিয়ে সুঠাম দেহের অধিকারীদের দলে ভিড়িয়ে নিজেই গড়ে তুলেছেন সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। রাজধানীর একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত ছাপিয়ে ঢাকার বাইরেও দেশীয় অস্ত্র ও ডিবি পুলিশের ভুয়া জ্যাকেট ব্যবহতার করে ছুটে যেত ওরা। এরপর টার্গেটকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে অপহরণের স্টইলে সর্বস্ব লুটে নিয়ে মিশন শেষেই ওরা লাপাত্তা হয়ে যেত। এমনই একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে ডিবি পুলিশ। ধরা পড়েছে একে একে ১৬ জন। উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়েছে ডিবি পুলিশে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি। গ্রেফতারকৃতরা হলো মো. শহিদুল ইসলাম মাঝি ওরফে শহীদ মাঝি, সাগর চন্দ্র মালি, শাহ আলম হাওলাদার, মো. কামরুল ইসলাম ওরফে রমিজ তালুকদার, মো: মাকসুদুল মোমিন ওরফে শামীম, মো. হাসান, মো. নুরুল ইসলাম, মো. খলিলুর রহমান, মো. আকরাম হোসেন, মো. দ্বীন ইসলাম ওরফে কাউছার আহম্মেদ, মো. ইলিয়াছ আহম্মেদ ওরফে নিরব, মো. ফরহাদ আলী, মো. রিয়াজ হোসেন হাওলাদার ওরফে রিয়াজুল, মো. শফিকুল ইসলাম লিটন, মো. সেরাজুল ইসলাম ও মো. জহিরুল ইসলাম পিন্টু। আজ মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

 

তিনি বলেন, গত ১৭ জুন ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বিকাশের এজেন্ট আব্দুল আজিজের কাছ থেকে সর্বস্ব নিয়ে নির্জন স্থানে তাকে ফেলে চলে যায়। এ ঘটনায় গত ২৪ জুন রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা রুজু করেন আব্দুল আজিজ।


ডিবি প্রধান বলেন, গোয়েন্দা-গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম মামলাটির ছায়া তদন্ত করে । তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ ও ছিনতাইয়ে জিড়ত দলটিকে শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সোমবার (১০ জুলাই) গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার মৌচাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের মূল হোতা মো. শহিদুল ইসলাম মাঝি ওরফে শহীদ মাঝিকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্য মতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা হতে সাগর চন্দ্র মালি, শাহ আলম হাওলাদার, মো. কামরুল ইসলাম রমিজ তালুকদার, মো. মাকসুদুল মোমিন ওরফে শামীম, মো. হাসান ও মো. নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।


তিনি বলেন, একই দিন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে খিলক্ষেত থানার ৩০০ ফুট রোডে অষ্টেলিয়ান স্কুলের সামনে হতে আরো ৯ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৩০টি মোবাইল ফোন, ১টি মাইক্রোবাস, ডিবির জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় পৃথক মামলা রুজু হয়েছে।
প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতারকৃতরা পারস্পরিক যোগসাজসে ঢাকার মতিঝিল, পল্টন, ধানমণ্ডি ও গুলশান এলাকার ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে কোন ব্যক্তি টাকা নিয়ে বের হওয়ার সময় তাদের টার্গেট করে। পরে ২/৩ জন মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের পিছু নেয়। পথে সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের দলের অন্য সদস্যরা প্রস্তুত থাকে। তারা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে তাদের মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয়। পরে ভিকটিমের কাছ থেকে সর্বস্ব নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যায়। গ্রেফতারকৃত ডাকাত দলের এই ১৬ সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।