সেলিনা আক্তার:
বাজারে ডিম ও পেঁয়াজের দাম আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী। সবজির বাজারও চড়া। মাছ-মাংস কিনতেও হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। এবার বাড়তি দামে এসে ঠেকেছে মসলাজাত পণ্য রসুনে। বাড়তি দামে রসুন কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সবমিলিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। বেশ কয়েক মাস ধরেই অস্থির মাছ, মাংসের বাজার, কাঁচাবাজার, এমনকি মসলাজাত পণ্যের বাজার। সম্প্রতি দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুরু হয়েছে তদারকি ও আমদানি। ভারত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। এরপরও নিয়ন্ত্রণে নেই পণ্যের কেনাবেচা। আজ শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের রসুলপু ব্রিজ মার্কেট সংলগ্ন রনি মার্কেট কাঁচাবাজার, রসুলপুর ব্রিজ সংলগ্ন গরীবের বাজারখ্যাত গরীবের কাঁচাবাজার, লালবাগের নবাবগঞ্জ বাজার, নিউ মার্কেটের বনলতা কাঁচাবাজার, পলাশী বাজারসহ বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আজ শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে। মহল্লার কোনো কোনো দোকানদার ১০০ টাকাও রাখছেন। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে রসুনের দামও কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। মিরপুর ১২ নাম্বার এলাকার মতলব স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী রাইসুল ইসলাম বলেন, মাস দেড়েক আগেও রসুনের কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ছিল। সেটা বাড়তে বাড়তে ২৫০ টাকায় এসেছে। গত দুই থেকে তিন দিনের ব্যবধানেই আমদানি করা রসুনের কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়। দেশি রসুন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। এই বিক্রেতা আরও বলেন, পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরায়ও বেড়েছে। তদারকি-অভিযান শুরু হলে পণ্যটির দাম হয়তো কিছুটা কমবে। বাজারে পেঁয়াজ, রসুনের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে আদা। কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়ে ইন্দোনেশিয়ার আদা ২৫০ থেকে ২৬০ এবং মিয়ানমারের আদা ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুরের ৯ নম্বর গলির আলু ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম পাইকারি দরে বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। পাইকারিতে আঁড়ৎ থেকে বেশি দাম কিনে আনায়, বেশি দামি বিক্রি করতে হচ্ছে। আজ শুক্রবার মানবেধে পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহখানেক আগেও পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি প্রতি ৫০ টাকা। আলুর দর আগে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করলেও এখন ৪৫-৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে, দাম কমার পর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৪ টাকায়। খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি প্রতিকেজি ১৩০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাজারে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় খোলা চিনি পাওয়া গেলেও প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, কোরবানির ঈদের পর থেকেই বাড়ছে আলুর দাম। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটি, বৃষ্টি, পরিবহন সংকটের কারণে আলুর পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দাম বেশি। যদিও বাজারে পর্যাপ্ত আলু রয়েছে। উল্টো কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
কাঁচাবাজারের দামের কথা বলাই বাহুল্য। বাজারে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগ সবজি। প্রতি কেজি পটল, চিচিঙা, ছোট শসা, জালি কুমড়া এবং কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ঝিঙা, বরবটি, রান্না করার শসা, কচুর মুখী, করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। গোল বেগুন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। কাঁচামরিচ প্রতিকেজি ২০০ টাকায় এবং টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি ডজন মুরগির ডিম পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। শাহজালাল ডিম ভাণ্ডারের বিক্রয় কর্মী মাজেদুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ পর ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে। এর আগে ১৮৫ টাকা ডজন হয়ে গিয়েছিল। এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কমেছে। তবে সামনের দিকে ডিমের দাম কমার সম্ভাবনা কম। তিনি আরও জানান, ডজন বা খাঁচা ধরে ক্রেতাদের ডিম কেনার প্রবণতা কমেছে। ভাঙা ডিমও বিক্রি বেড়েছে।
মাংসের বাজারের চিত্রও অভিন্ন। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি কিনতে কেজিতে খরচ ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা। গরু ও খাসির মাংস আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারেও নেই সুখবর। বাজারে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ তবে এখনও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ইলিশ মাছ। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ১ হাজার টাকারও বেশি। আর ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকায়। প্রতিকেজি রুই ও কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। তেলাপিয়ার কেজি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা, পাঙাশ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, চাষের কই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বাজারে বিভিন্ন শাকের দাম কিছুটা স্থিতিশীল। ক্রেতারা বলছেন, শাকের আঁটির আকার ছোট হয়েছে। প্রতি আঁটি লাল, মুলা, কলমি শাক ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে পুঁই, মিষ্টি কুমড়া, লাউ শাকের আঁটি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নিত্যপণ্যের বাজারে এমন দরদাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে নিত্যপুণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছেন। নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী ঠেকাতে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের তাগিদ দিয়েছেন ক্রেতারা।