নাটোর প্রতিনিধি
নিজের জমাজমি নেই। অন্যের খেজুর গাছের রস থেকে গুড় বানিয়ে বিক্রি করতেন। সেই আয়ে দুই ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন দিনমজুর পিতা আব্দুস সাত্তার মৃধা। ছোট ছেলে মুরাদ স্নাতক পাশ করেছেন। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। পিতার স্বপ্ন ছিল- ছেলেকে বড় অফিসার বানাবেন।
কিন্তু ডেঙ্গুজ্বর সব শেষ করে দিল। সোমবার রাজশাহী মেডিকেলে মারা গেছেন বাবার বুকের ধন মুরাদ। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর মুরাদের চাচতো বোন দোলেনাও (৫০) অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তিনিও মঙ্গলবার সকালে মারা গেছেন। সবমিলিয়ে শোকে ভাড়ি হয়ে উঠেছে মুরাদের বাড়ি। বুকটা ভারি হয়েছে দিনমজুর পিতা আব্দুস সাত্তার মৃধারও। সন্তানের সুখ দেখতে না পেরে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি।
মুরাদের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার খাটাসখৈল গ্রামে। মঙ্গলবার মুরাদ ও তার চাচাতো বোন দোলেনাকে দাফন করা হয়েছে। বাড়িতে বসে বিলাপ করতে করতে মুরাদের পিতা আব্দুস সাত্তার বলেন, দুই ছেলেকে মানুষ করতে তিনি নিজেকে বিসর্জন দিয়েছেন। খেজুরগাছ লাগিয়ে- সেই টাকায় সন্তানের পড়ার খরচ যুগিয়েছেন। বড় ছেলে লেখাপড়া শেষ করে একটি কোম্পানিতে চাকুরি করছেন। ছোট ছেলে মুরাদও স্নাতকে ভালো রেজাল্ট করেছেন। বিসিএসের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। স্বপ্ন ছিল ছোট ছেলে মুরাদ অনেক বড় অফিসার হবে। কিন্তু তা আর হলো না।
জানা গেছে, মুরাদ রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৬ জানুয়ারি বাড়ি আসেন মুরাদ। বাড়ি আসার পর মুরাদ বমি আর জ্বরে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গুজ্বর ধরা পড়ে। পাঁচ দিন চিকিৎসার পরও শারিরীক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল না। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে ডেঙ্গুর সাথে লিভার ও কিডনির সমস্যাও ধরা পড়ে। মুরাদকে ডায়ালাইসিস দেওয়া হচ্ছিল। তাতেও সুস্থ হচ্ছিলেন না। সবশেষ গত মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো ডায়ালাইসিসে নেওয়া হলে মুরাদের অবস্থার অবনতি ঘটে। সেই ধাক্কাতেই সন্ধ্যায় মারা যান মুরাদ। রাতেই মুরাদের লাশ বড়াইগ্রামের খাটাসখৈল গ্রামের বাড়িতে আনা হয়।
মুরাদদের দুই ভাইকে লেখাপড়া করাতে গিয়ে ঘরবাড়িও করতে পারেননি মুরাদের পিতা আব্দুস সাত্তার মৃধা। রাস্তার পাশে মাটির পুড়নো কাঁচা বাড়ির আঙিনায় খাটিয়াতে মুরাদের লাশ রাখা ছিল। গ্রামে মুরাদের জানাজার মাইকিং হচ্ছিল। মুরাদের খাটিয়া ঘিরে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।মুরাদের স্বজনরা নিউজ পোস্ট বিডিকে জানান, শুধু লেখাপড়ায় নয়-আচার ব্যবহারেও মুরাদ খুব ভালো ছিলেন। এজন্য আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশিরাও মুরাদকে খুব ভালোবাসতেন। মুরাদের মৃত্যুতে গ্রামে শোকের ছায়া নেমেছে।
মুরাদের কলেজ শিক্ষক রুহুল আমীন বলেন, মুরাদ খুব প্রিয় ছাত্র ছিল। কয়েকদিন আগেও মুরাদের খবর নিয়েছি। মুরাদদের দুইভাইকে লেখাপড়া করাতে গিয়ে খুব কষ্ট করেছেন মুরাদের পিতা আব্দুস সাত্তার। এখন মুরাদের পিতাকে শান্তনা দেওয়ার ভাষাও খুজে পাচ্ছেন না তিনি।