ড. ইউনূসের বিচার স্থগিত ইস্যুতে ওবামা-হিলারিসহ ৯ জনকে বাংলাদেশি আইনজীবীদের পাল্টা চিঠি

প্রকাশিত: ৭:৪৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতি মামলার বিচার স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো খোলা চিঠি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনসহ ৯ জন নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তির উদ্দেশে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন আইনজীবীরা। আজ
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) ই-মেইল মাধ্যমে আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভ‚ষণ বড়–য়া, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার এবং মোহাম্মদ ইমরুল কায়েস খান এ চিঠি পাঠান। চিঠির অনুলিপিটি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও ড. ইউনূসকেও পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার (২৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতি মামলায় ড. ইউনূসকে দণ্ড দেওয়া হতে পারে- এমন উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে তার বিচার স্থগিতে বিশ্বের দেড় শতাধিক নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি পাঠান। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ীও ছিলেন।
চিঠিতে বারাক ওবামা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতে চলমান মামলা স্থগিত করার বিবৃতি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে জানানো হয়। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ আদালতে চলমান বিচার বাধাগ্রস্ত করা আন্তর্জাতিক আইন এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইন তথা সংবিধানের পরিপন্থি এবং আদালত অবমাননার শামিল বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, চলমান মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে এ ধরনের একপাক্ষিক বিবৃতি প্রদান, অন্য বিচারপ্রার্থীদের জন্য বৈষম্যমূলক হয়রানি।


আইনজীবীরা চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, তাদের (বিবৃতিদাতাদের) মত বিজ্ঞজনদের কাছ থেকে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ মামলা স্থগিতের জন্য এ ধরনের একপাক্ষিক অপ্রত্যাশিত বিবৃতি অনাকাক্সিক্ষত এবং সারা বিশ্বের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এছাড়া শ্রমজীবী মানুষের আইন সংগত অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে তাদের বিবৃতি বাধা হয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের এ বিবৃতিটি একটি নেতিবাচক উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চিঠিতে বিচার স্থগিত চেয়ে বিবৃতি বা প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো খোলা চিঠি অবিলম্বে প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আদালতে চলমান কার্যক্রম নিয়ে এ ধরনের বিবৃতি প্রদান না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) এক টুইটবার্তায় ড.ইউনূসের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহŸান জানান সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন। সেখানে তিনি বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের সম্প্রতি দেওয়া বিবৃতিটি যুক্ত করে দেন।
টুইটবার্তায় হিলারি লিখেন, আমিসহ ১৬০ জনের বেশি বিশ্বনেতা মানবিক ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের অবস্থানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ নিগ্রহ বন্ধের দাবি জানানোর আহŸান জানান হিলারি। তবে শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি মামলার বিচার স্থগিত নিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপকে ড. ইউনূসের ‘বিবৃতি ভিক্ষা’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূসের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের প্রতি এত আত্মবিশ্বাস থাকলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়ান কেন?
বিবৃতিদাতাদের প্রতি আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা বিবৃতি দিয়েছেন তাদের আহŸান জানাই, বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ পাঠান, আইনজীবী পাঠান। দলিল দস্তাবেজ, কাজগপত্র ঘেঁটে দেখুন অন্যায় আছে কি না।