ঢাকার দুই সিটির কাউন্সিলর নির্বাচনে বিদ্রোহী নিয়ে অস্বস্তিতে দু’দল
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কাউন্সিলর পদে বড় দুই দলে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর ছড়াছড়ি। দফায় দফায় বৈঠক করে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও ‘বিদ্রোহ’ সামাল দিতে পারেনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
এমন পরিস্থিতিতে একরকম অস্বস্তিতে পড়েছে দল দুটি। একক প্রার্থী নিশ্চিতে বিদ্রোহীদের বুঝিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছেন উভয় দলের নীতিনির্ধারকরা।
তবে বিদ্রোহীদের প্রত্যাশা- যেহেতু ইতিমধ্যে চারটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে, তাই ঘোষিত তালিকা পর্যালোচনা করে যোগ্য প্রার্থীদের সমর্থন দেয়া হবে- যা দলের জন্য ইতিবাচক হবে। এজন্য দুই দলের বিদ্রোহীরা জোর লবিং-তদবির শুরু করেছেন।
তবে কাউন্সিলর পদে কোনো দলই সবার জন্য উন্মুক্ত করবে না বলে নিশ্চিত করেছে হাইকমান্ড।
৩০ জানুয়ারি দুই সিটির মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ৩১ ডিসেম্বর। এ দিন দুই সিটিতে সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৭২টি পদের বিপরীতে ১০২৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। আ
গামী ৯ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ওইদিনই চূড়ান্ত হবে দুই দলে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকছেন কি না। এদিকে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর দেখা গেছে, কোনো ওয়ার্ডে কাউন্সিলর (সাধারণ) পদে সর্বোচ্চ ১৩ জনও প্রার্থী রয়েছেন। এমনকি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদেও রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। এর মধ্যে দক্ষিণে ২২নং ওয়ার্ডে ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আমরা প্রতি ওয়ার্ডে একক প্রার্থীকে দল থেকে সমর্থন দিয়েছি। আমাদের চেষ্টা থাকবে শেষ পর্যন্ত দলীয় একক প্রার্থী রাখা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। কিন্তু পরে যে কোনো কারণেই হোক তা হয়নি। তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। সেটা তো বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু উৎসাহ জোগাবেই।
কাউন্সিলর পদে শেষ পর্যন্ত উন্মুক্ত করে দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটার আর কোনো সুযোগ নেই। কারণ বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। ফলে একক প্রার্থী করতে না পারলে সেটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
বিএনপির কাউন্সিলর বাছাই সংক্রান্ত মনোনয়ন বোর্ডের সমন্বয়ক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে কিছু ওয়ার্ডে একক প্রার্থী নিশ্চিত করা যায়নি। তবে আমাদের হাতে আরও কয়েকদিন সময় আছে। এর মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বোঝাতে সক্ষম হব। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবে বলে আশা করি।
আওয়ামী লীগ
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই ক্ষমতাসীন দলে রয়েছেন এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় এবং অতীতে বিদ্রোহীদের কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় তাদের বেশির ভাগই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকার সিদ্ধান্তে এখনও অনড়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কদম আলী মাদবর। এ ছাড়াও এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আরও দুজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তারা হলেন- ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুল ইসলাম আশিক ও সাবেক কাউন্সিলর মো. ইসমাইল হোসেন বেনু। ৩নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. জিনাত আলী মাদবর।
এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সহসভাপতি কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলেছেন। নির্বাচনে এলাকার সাধারণ মানুষ এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে রয়েছেন বলেও দাবি করেন মানিক।
৬নং ওয়ার্ডে রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন রবিনকে আওয়ামী লীগের সমর্থন দেয়া হয়েছে। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আরও দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তারা হলেন- বর্তমান কাউন্সিলর ও রূপনগর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী রজ্জব হোসেন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পি। জানতে চাইলে বাপ্পি বলেন, আমি নির্বাচন করব। আমার কর্মী-সমর্থকরা ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে।
৭নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. তফাজ্জল হোসেন। মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এজাজ আহমেদ স্বপনও এখানে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ৮নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন মো. আবুল কাশেম মোল্লা।
বর্তমান কাউন্সিলর ও শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী টিপু সুলতান এই ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন। ৯নং ওয়ার্ডে আবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়েছে বর্তমান কাউন্সিলর মুজিব সারোয়ার মাসুমকে। ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিম খানও এখানে প্রার্থী হয়েছেন।
মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সদস্য দেওয়ান আবদুল মান্নানকে ১১নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়েছে। এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বাবুল হোসেন।
১৩নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দল সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর মো. হারুন-অর-রশীদ। এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইসমাইল মোল্লা।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার মানুষ আমাকে চায়। দলের নেতাকর্মীরাও আমার সঙ্গে আছেন। আমি নির্বাচন করবই। ১৪ নং ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মইজউদ্দিন। বর্তমান কাউন্সিলর ও ঢাকা মহনগর উত্তর যুবলীগের সহসভাপতি হুমায়ূন রশিদ জনি এই ওয়ার্ডে আবার প্রার্থী হয়েছেন।
১৫নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালেক মোল্লা। এই ওয়ার্ডেও আওয়ামী লীগের আরও অন্তত দুইজন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান সরদার এবং ক্যান্টনমেন্ট থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নাসিমা হক ডলি।
এছাড়া উত্তরের ৫৪টির মধ্যে বাকি ওয়ার্ডগুলোর প্রতিটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনেরও বিভিন্ন ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ১১নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর হামিদুল হক শামীম। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান বাবুল এবং আওয়ামী লীগ নেতা নুরুন্নবী ভূঁইয়া।
১৩নং ওয়ার্ডে পল্টন থানার আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হককে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সালাম খান সেলিম, ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন।
১৯নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবুল বাশার। বর্তমান কাউন্সিলর মুন্সী কামরুজ্জামান কাজল এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালামও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
২০নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দীন আহমেদ রতন। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন মনু ও শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম আতিকুর রহমান এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
৫০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুম মোল্লা। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বিদ্রোহী প্রার্থী। ৬০নং ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা রইসউদ্দিন। ওই ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী লুতফর রহমান রতন।
৬২ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদকে আওয়ামী লীগের সমর্থন দিলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন রতন মেম্বার। ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার ছোটভাই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদুর রহমান বাবলু মোল্লা।
বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সিফাত সাদেকীন চপল।
৬৫নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর সামসুদ্দিন ভূঁইয়া। ডেমরা থানা যুবলীগের সাবেক সভাপতি হারুনার রশিদ এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফিরোজ আলম।
এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ আলী। ৬৮নং ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়েছে মাহমুদুল হাসানকে। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম।
৬৯নং ওয়ার্ডে হাবিবুর রহমান হাসুকে দল মনোনয়ন দিলেও ডেমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবু, আওয়ামী লীগ নেতা তোতা মিয়া, যুবলীগ নেতা আবদুল আওয়াল ও সালাউদ্দিন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এদিকে সাধারণ কাউন্সিলর পদের পাশাপাশি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদেও অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।
প্রার্থী বদলে বিভ্রান্তি
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চারটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উত্তরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন তিতুকে।
এর আগে এই ওয়ার্ডে প্রার্থী হিসেবে ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ হোসেনকে সমর্থন দেয়া হয়েছিল। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্বঘোষিত প্রার্থী মো. জামান মোস্তফাকে পরিবর্তন করে শফিকুল ইসলামকে সমর্থন দেয়া হয়েছে। একই ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনও।
এদিকে প্রার্থী বদল করা নিয়ে ওয়ার্ডগুলোতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মনোনয়ন পরিবর্তন করায় কেউ কেউ কেউ দাবি করছেন, সেখানে হাইকমান্ড থেকে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্তের কথা তাদের জানানো হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, কাউন্সিলরদের মধ্যে উন্মুক্ত নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি ওয়ার্ডে দল থেকে আমরা একজন করে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছি।
বিএনপি
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটির প্রায় সব ওয়ার্ডেই বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সবুজবাগ থানা বিএনপির সভাপতি মো. গোলাম হোসেনকে সমর্থন দেয়।
কিন্তু দলের সমর্থন না পেয়ে এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে থানা বিএনপি নেতা মো. মোরসালিন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। জানতে চাইলে মো. মোরসালিন যুগান্তরকে বলেন, বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম।
দল মূল্যায়ন করবে- এ আশায় আমি দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করি। কিন্তু কাউন্সিলর পদে আমাকে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়নি। তাই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব।
১০ নম্বর ওয়ার্ডে দল সমর্থন দিয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন অর রশীদকে। বিএনপির সমর্থন না পেলেও এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন মতিঝিল থানা বিএনপি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।
তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আনোয়ার যুগান্তরকে বলেন, আমি দলের সমর্থন পাইনি। কিন্তু নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর অনুরোধে আমি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করব।
দলীয় সমর্থন পাওয়া হারুন অর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে আমার ভূমিকা এবং সাংগঠনিক শক্তিসহ সবকিছু বিবেচনা করে দল আমাকে সমর্থন দিয়েছে। এলাকার নেতাকর্মীরাও আমার সঙ্গে রয়েছেন।
তিনি বলেন, দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচন করলে তা দলীয় শৃঙ্খলা-পরিপন্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। বিষয়টি হাইকমান্ড গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। এই দুঃসময়ে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে বলে আশা করি।
দক্ষিণের ১৫নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলটির সমর্থন পেয়েছেন থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক উদ্দিন ভূঁইয়া। এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে থানা বিএনপির সহসভাপতি আবু নাছের লিটন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
জানতে চাইলে লিটন বলেন, আমাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য স্থানীয় নেতারা দলের হাইকমান্ডকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু দল আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে অন্য আরেকজনকে দিয়েছেন। যিনি এলাকাতেও থাকেন না। দলের সমর্থন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করব। দক্ষিণের ২৭নং ওয়ার্ডে দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন থানা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহিদা মোরশেদ।
বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমেদ সালেম। ১৬নং ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। সমর্থন না পেয়ে এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন রাজিয়া সুলতানা। এমন চিত্র দক্ষিণের প্রায় সব ওয়ার্ডেই।
দক্ষিণের মতো উত্তরেও অনেক ওয়ার্ডে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। ৩নং ওয়ার্ডে বিএনপি থেকে হাজী আবু তৈয়বকে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়। কিন্ত দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এ ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন পল্লবী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বুলবুল মল্লিক।
১১নং ওয়ার্ডে সাবেক কমিশনার শামীম পারভেজকে এবার দলীয় সমর্থন দেয়া হয়। কিন্ত ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল থেকে আমাকে সমর্থন দেয়নি, তবুও মনোনয়ন জমা দিয়েছি। দল তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে বলে আশা করি। শেষ পর্যন্ত দল যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা আমি মেনে নেব।
মহানগর বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ১, ৯, ১৯, ২০, ৩৩ ও ৫১নং ওয়ার্ড এবং উত্তর সিটিতে ২৯, ৪০ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে কাউকে এখনও সমর্থন দেয়নি দলটি।
এসব ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ১৯নং ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি আব্দুল মোতাবেল রুবেল, রমনা থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। ২০নং ওয়ার্ডে বিএনপির পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এমএ হান্নান ও রফিকুল ইসলাম স্বপন। সূত্র যুগান্তর।