নিজেস্ব প্রতিবেদক:
আইকিউ এয়ারের সূচকে বায়ুর মান ৩০০ এর বেশি হলে সেটাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থা বলা হয়। এর অর্থ, এ বায়ু মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর গোড়ানে বায়ুর মান ছিল ১২২০। শুধু গোড়ান নয়, আজ ঢাকার ৯টি স্থানে বায়ুর মান ৩০০ পার হয়ে গেছে।
আজ বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২৪টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আইকিউ এয়ারের মানসূচকে ঢাকার গড় বায়ুর মান ২৯২। বায়ুর এই মানকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে ধরা হয়।
বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর মধ্যে গোড়ান ছাড়া আর যেসব এলাকায় বায়ুর মান মারাত্মক দুষিত, সেগুলোর মধ্যে আছে ইস্টার্ন হাউজিং–২ (৬৭১), ঢাকার মার্কিন দূতাবাস (৪২৪), শান্তা ফোরাম (৪১৬), গুলশান লেক পার্ক (৪০৭), পশ্চিম নাখালপাড়া রোড (৪০৪), গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (৩৫৮), কল্যাণপুর (৩৩৬) ও মহাখালীর আইসিডিডিআরবি (৩১৬)। আজ অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর বায়ুর মানও নাজুক। এর মধ্যে চট্টগ্রামে মান ১৩৭, রাজশাহী ১৯৭ ও খুলনা ১৮০।
যদি কোনো এলাকায় দূষণের মান পরপর তিন দিন ৩০০-এর বেশি হয়, তবে সেই এলাকায় স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়। ঢাকায় এ মাসে একাধিক দিন বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালামের নেতৃত্বে একদল গবেষক এক যুগের বেশি সময় ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দূষণ পরিস্থিতি দেখছেন। আজকের মারাত্মক পরিস্থিতি সম্পর্কে অধ্যাপক সালামের বক্তব্য, কোনো কোনো দিন দূষণের মাত্রা এমন চরমে ওঠে। এখানে কলকারখানা বা যানবাহনের দূষিত ধোঁয়া, খড়কুটো পোড়োনো, ইটভাটা ইত্যাদি কারণ তো আছেই; এর সঙ্গে আবার আবহাওয়ার কারণও আছে। এমনিতেই এখন প্রচুর ধুলো জমা হয়ে আছে। এর সঙ্গে দূষণের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণহীন থাকায় মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেই সতর্কবার্তায় ঢাকাবাসীর উদ্দেশে আইকিউ এয়ারের পরামর্শ, বাইরে বের হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। আরও একটি পরামর্শ, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, বিশেষ করে যাঁদের শরীরে কোনো ধরনের সমস্যা আছে বা রোগে ভুগছেন, তাঁদের জন্য মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া উচিত নয়। এ অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা কেউ মাস্ক ছাড়া থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪৮ গুণ বেশি।