ঢাকায় করোনার ঝুঁকি কমাতে এবার এসএমএস-এ গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি চললেও বিদ্যুৎ বিল না পেয়ে অনেক গ্রাহক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ইতোমধ্যে কেউ কেউ গণমাধ্যমে ফোন করে খবর নিয়েছেন কেন তারা মার্চ মাসের বিলের কপি এখনও হাতে পাননি। এমন ফোন পাচ্ছে রাজধানীর বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোও। বিষয়টি নিয়ে ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের তরফ থেকে আগামী মে মাস পর্যন্ত লেট ফি বা বিলম্ব মাসুল মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে গ্রাহকের যে মাসিক বিল আসবে জুন মাসে গিয়ে শুধু সেই টাকা দিলেই হবে। ফলে বিল পাওয়া না পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অন্যদিকে, ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানিই বলছে করোনার ঝুঁকি কমাতে এবার এসএমএস-এর মাধ্যমে গ্রাহকের বিল জানানো হবে। কোনও কাগজ দেয়া হবে না। গ্রাহক মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে সেই বিল দিতে পারবে।
বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি দুটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, করোনাভাইরাস কাগজের ওপরেও দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে বলে শোনা যায়। আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যুৎ বিল দেওয়াটাও এখন ঝুঁকিপূর্ণ। সঙ্গত কারণে অনলাইনে বিলটি পাঠিয়ে দিলে গ্রাহক সেই বিল প্রিন্ট করে ব্যাংকে অথবা মোবাইলের মাধ্যমে জমা দিতে পারবেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, এই মাসে বিদ্যুতের বিল পাইনি। সাধারণত ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে চলে আসে। এবার না পাওয়ায় এখনও বিল দিতে পারিনি।
মিরপুরের আরেক বিদ্যুৎ গ্রাহক ডালিয়া রহমান জানান, ডেসকো সাধারণত ১২ তারিখের মধ্যেই বিল দেয়। এবার পাইনি। খানিকটা দুশ্চিন্তায় আছি। একই তথ্য জানান সাতমসজিদ রোডের আরেক বাসিন্দা আরিফুর রহমান।
তাদের এই দুশ্চিন্তার বিপরীতে ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমীর আলী বলেন, আসলে করোনার কারণে এবার বিদ্যুৎ বিল আমরা কাগজে দিতে চাইছি না। বিল যাবে অনলাইনে। গ্রাহকের নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হবে বিদ্যুৎ বিল। এছাড়া কেউ যদি এসএমএস না পান সেক্ষেত্রে আমাদের ওয়েবসাইট এবং আমাদের ডেসকো নামে একটি অ্যাপস আছে সেখানে গিয়ে গ্রাহকের আইডি দিয়ে বিদ্যুৎ বিল দেখতে পারবেন। এরপরেও যদি কোনও সমস্যা হয় তাহলে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেও বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে জানা যাবে।
প্রায় একই কথা জানান ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ( ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান।তিনি বলেন, ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার অনলাইনেই বিল দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। আমরা আমাদের প্রত্যেক গ্রাহকের মোবাইলে এসএমএস করে বিদ্যুৎ বিল পাঠিয়ে দেবো। এখন গ্রাহক চাইলে মোবাইলেই বিদ্যুৎ বিল দিতে পারেন। আবার, বিলের কপি নিয়ে ব্যাংকেও জমা দিতে পারেন। এছাড়া কেউ বিল না পেলে আমাদের কল সেণ্টার অথবা স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, আসলেই এ মাসে তাড়াহুড়ো করে ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিল দেওয়া উচিত হবে না। তাই আমরা বিলম্ব মাসুল মওকুফ করেছি। ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং এপ্রিল মাসের বিলের ক্ষেত্রে এই নিয়ম আমরা রেখেছি। ফলে এসএমএস পাওয়ার পর গ্রাহক আস্তে-ধীরেই বিল পরিশোধ করতে পারবেন।
সরকার করোনার সংক্রমণ রোধে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের বিলে বিলম্ব মাশুল মওকুফ করেছে। অর্থাৎ এই সময়ে কোনও বিল না দিলে বিলম্ব মাশুল দিতে হবে না। ব্যাংকগুলোতে বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের বিল দিতে অধিক লোকসমাগম এড়াতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে সারা বিশ্বই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে।
সরকারের ২২ মার্চ জারি করা আদেশে বলা হয়, গ্রাহকরা বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে থাকেন। বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অনেক গ্রাহকই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসাবাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাহকেরা ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিল পরিশোধ করতে পারবেন না বলে প্রতীয়মান হয়। ফলে এই তিন মাসের বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনও বিলম্ব মাসুল বা সারচার্জ দিতে হবে না। অবিলম্বে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর মাধ্যমের এই আদেশ কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ শুধু আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রযোজ্য।