ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন উচ্চ আদালত। বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধে আদালতের রায় ও আদেশ বাস্তবায়ন না করা, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে আদালতের স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটানো এবং আদালত অবমাননার অভিযোগে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না—তা রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ওয়াসার এমডিকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শুনানিতে আবেদনাকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে ব্যক্তিগত হাজিরা দিতে আর্জি জানান। আদালত বলেছেন, রুলের জবাব ও হলফনামা উপস্থাপনের পর তা বিবেচনা করে হাজিরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কাউকে সাজা দেওয়া আদালতের কাজ নয়। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা দেখাই মূল বিষয়।
আদালতে আবেদনকারী মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী আমাতুল করীম ও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী উম্মে সালমা।
গত ৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট হাইকোর্ট পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ইপিটি ছাড়া বুড়িগঙ্গা তীরে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের তথ্যাদিসহ নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে যেসব সুয়ারেজ লাইন দিয়ে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য পড়ছে, সেগুলো ছয় মাসের মধ্যে বন্ধে ওয়াসার যে অঙ্গীকার, তা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়।
ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকায় নদীর তীরবর্তী পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন ২৩১টি শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর আদালতে প্রতিবেদন দেয়। শুনানি নিয়ে ২০ জানুয়ারি হাইকোর্ট বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকায় নদীর তীরে থাকা পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন ২৩১টি শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে বন্ধ করতে নির্দেশ দেন।
নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন ওপর গতকাল বুধবার শুনানি হয়। আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, বুড়িগঙ্গায় সুয়ারেজ সংযোগ না থাকা বিষয়ে দৃশ্যত অসত্য তথ্যের বিষয়ে গত বছরের ১৭ নভেম্বর হাইকোর্ট ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) কারণ দর্শাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে হলফনামা আকারে দেওয়া ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন না করার আরজি জানান। এখন পর্যন্ত ওই কারণ দর্শানোর জবাব না দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারির আরজি জানানো হয়। আদালত আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিনে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন।
বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে এইচআরপিবির পক্ষে ২০১০ সালে একটি রিট করা হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১ জুন তিন দফা নির্দেশনাসহ রায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং বুড়িগঙ্গা নদীতে সংযুক্ত সব পয়ঃপ্রণালির লাইন (সুয়ারেজ) ও শিল্পকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের লাইন ছয় মাসের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে ওই নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত বছরের ৩০ এপ্রিল সম্পূরক আবেদন করে এইচআরপিবি।