সানজিদা মাহবুবা:
কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত বেআইনি ও সহিংস ঘটনার ‘সত্যানুসন্ধান’ করতে গত বছরের ৮ অক্টোবর একটি কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সাত সদস্যের এই কমিটিকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনো সেই কাজ শেষ করতে পারেনি কমিটি।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমিটির পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে, পর্যাপ্ত সাক্ষীর অভাবে প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে। কমিটির সদস্যদের দাবি, নির্ভুল ও প্রামাণ্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্যই বেশি সময় নেওয়া হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি) কমিটির সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তদন্ত) শেখ আইয়ুব আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ডাকা, তাদের কাছ থেকে অভিযোগ শোনাসহ অনেক কিছু করতে হচ্ছে। তদন্ত কমিটির সদস্যদেরও বিভিন্ন কাজ থাকে। এ কারণে একটু সময় লাগছে।’
কমিটির পক্ষ থেকে উপাচার্যের কাছে অতিরিক্ত সময় চাওয়া হয়েছিল বলে জানান শেখ আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলেছে। আশা করছি, শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হবে।
সাক্ষী কম পাওয়ায় তদন্তে দেরি হচ্ছে বলে জানান প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘কমিটি অনেক ডকুমেন্ট (তথ্য-প্রমাণ) পেয়েছে। তবে ডকুমেন্টের পক্ষে সাক্ষীও লাগে। কারণ, শুধু ডকুমেন্টের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। কিন্তু সাক্ষী পাওয়া গেছে খুব কম। অনেক ভিডিও-অডিও জমা পড়েছে। এগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখা হচ্ছে।’
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২৪ এর ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। এরপর তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ।
পরদিন ১৬ জুলাই রংপুরে আন্দোলকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদসহ কয়েকজন নিহত হন। সেদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। ১৭ জুলাই দুপুর নাগাদ সব হলের নিয়ন্ত্রণ নেন আন্দোলনকারীরা।
এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলন দমনে হল খালি করার নির্দেশ দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে না চাওয়ায় ক্যাম্পাসে পুলিশি অভিযান চালিয়ে হলগুলো ফাঁকা করা হয়। শিক্ষার্থীদের ওপর নিক্ষেপ করা হয় সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন নিয়াজ আহমেদ খান। দায়িত্ব নিয়ে গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্যাম্পাসে সংঘটিত বেআইনি ও সহিংস ঘটনার সত্যানুসন্ধান করে জড়িতদের চিহ্নিত করতে একটি কমিটি গঠন করে দেন তিনি।