তাঁরা কখনো শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, আরমান বা শাহাদাত
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
‘হ্যালো। হ্যালো। আপনার সঙ্গে আমাদের বস সুব্রত দাদা কথা বলবেন। দাদার সঙ্গে কথা বলেন।’
কখনো শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, কখনো আরমান, কখনো শাহাদাত হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে চার-পাঁচ বছর ধরে চাঁদাবাজি করে আসছিল সংঘবদ্ধ একটি অপরাধী চক্র।
গত মঙ্গলবার রাতে শীর্ষ সন্ত্রাসীর পরিচয় দিয়ে চাঁদা আদায়কারী চক্রের তিনজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
চক্রটি কীভাবে, কবে থেকে এবং কাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছে—এসব তথ্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ঢাকার আদালত তিনজনের প্রত্যেককে এক দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন।
শীর্ষ সন্ত্রাসীর পরিচয়ে চাঁদা আদায়কারী সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের তিন সদস্যকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
তিন আসামি হলেন গাজীপুরের বেলায়েত হোসেন ওরফে ইলিয়াস (৪৮), কাইয়ুম মিয়া ওরফে বাবুল ওরফে মোস্তফা (৪৯) ও জুয়েল মিয়া (৩০)। কাইয়ুম ও জুয়েলের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর থানার লুন্দি গ্রামে।
ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আশরাফ উল্লাহ আজ বৃহস্পতিবার বলেন, চার-পাঁচ বছর ধরে এই অপরাধী চক্রের সদস্যরা ভারতে অবস্থান করা শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনসহ অন্য সন্ত্রাসীদের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। এই চক্রের সদস্যরাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদসহ কয়েকজনকে ফোন করে চাঁদা দাবি করেন।
এডিসি আশরাফ উল্লাহ আরও বলেন, ‘চক্রের সদস্যরা প্রথমে টার্গেট করা ব্যক্তিকে ফোন দেন। তারপর কোনো একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম উল্লেখ করে বলেন, …আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। তখন ব্যক্তিকে বলা হয়, কয়েক দিন আগে ঢাকার সাভার এলাকায় আমার কয়েকজন সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। তারা বর্তমানে ভারতে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসার জন্য ১৫ লাখ টাকা দরকার। ১০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছি। বাকি ৫ লাখ টাকা দিয়ে দেন।’
পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফ উল্লাহ জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসীর পরিচয় দিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেছেন চক্রের সদস্যরা। গ্রেপ্তার তিন আসামি জিজ্ঞাসাবাদে নানা ধরনের তথ্য দিচ্ছেন।
চক্রের সদস্যরা যেভাবে শনাক্ত
আদালতে দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদন এবং তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ভারতীয় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একটা ভারতীয় মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তির কাছে ফোন দিত চক্রের সদস্যরা। নিজেদের পরিচয় দিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, শাহাদাত, আরমান হিসেবে। সম্প্রতি ভারতীয় একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে টার্গেট করা তিন ব্যক্তিকে ফোন দেয় এই চক্রের সদস্যরা। তাঁরা তিনজন থানায় ডায়েরিও করেন। ডায়েরির সূত্র ধরেই রাজধানীর দারুসসালাম এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের তিন সদস্য বেলায়েত, কাইয়ুম ও জুয়েল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) প্রাণ কৃষ্ণ সরকার বলেন, নিজেদের শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয় দিয়ে চাঁদা আদায়কারী চক্রের প্রধান ব্যক্তি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁর নাম সাদেক ফকির। কয়েক বছর ধরে সাদেক ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁর পরিকল্পনায় সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যরা কখনো দিনাজপুর কিংবা বেনাপোল সীমান্তে অবস্থান করে ভারতীয় মোবাইল সিম ব্যবহার করে ফোন দিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছিল।
শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে চাঁদা আদায়কারী চক্রের প্রধান সাদেক ফকিরের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর থানার লুন্দি গ্রামে।
ভারতে অবস্থান করা সাদেক ফকিরের সঙ্গে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনদের যোগাযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবির এডিসি আশরাফ উল্লাহ বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সুব্রত বাইনদের সঙ্গে সাদেকের যোগাযোগ পাওয়া যায়নি। সংঘবদ্ধ এই অপরাধী চক্রের সদস্যরাই নিজেদের শীর্ষ সন্ত্রাসীর পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিল।
গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামির কাছ থেকে ছয়টি মুঠোফোন, সাতটি বিভিন্ন কোম্পানির সিম, দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনসহ একাধিক ফোন নম্বর ডিরেক্টরি বই জব্দ করা হয়েছে।
মামলার বাদী ডিবির এসআই হাসানুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন সংস্থার ফোন ডিরেক্টরি সংগ্রহ করত এই অপরাধী চক্র। পরে টার্গেট করা ব্যক্তিকে ফোন দিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী বাইন বলে পরিচয় দিয়ে কথা বলতেন।
এডিসি আশরাফ উল্লাহ বলেন, চার-পাঁচ বছর ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসীর পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি এবং চাঁদা আদায়কারী চক্রের সব সদস্যকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।