তাইওয়ানের ১৩ জানুয়ারির নির্বাচন যে কারণে বাকি বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তাইওয়ানের ভোটাররা তাদের জন্য নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে আগামী ১৩ জানুয়ারি ভোট দিতে যাচ্ছেন। যে ভোটের দিকে বেশ গভীরভাবে তাকিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন। কারণ এই স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটি ওয়াশিংটন এবং বেইজিং দুই পক্ষের জন্যই কৌশলগতভাবে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই ভোটের ফলাফল চীনের সঙ্গে দ্বীপরাষ্ট্রটির সম্পর্কে বড় প্রভাব ফেলতে পারে এবং একইসঙ্গে এই পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়াতে পারে ও সারা বিশ্বের অর্থনীতিকেই প্রভাবিত করতে পারে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) সাই ইং-ওয়েন। চীন এই রাজনৈতিক দলকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে দেখে। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পর সংবিধান অনুসারে সরে দাঁড়াচ্ছেন সাই ইং-ওয়েন। এখন তার উত্তরসূরি হওয়ার লড়াইয়ে তিন জন প্রার্থী আছেন। তবে ডিপিপি অন্যদের সাথে জোট বেঁধে ১১৩ সদস্যের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার আশা করছে, তাহলে আইন তৈরি, বাজেট, যুদ্ধ ঘোষণা এবং কূটনৈতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা তাদের হাতেই থাকবে।
তাইওয়ানের জনগণ কী চায়?
চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের চলমান উত্তেজনার মধ্যেও নানা গবেষণা বলছে, তাইওয়ানের জনগণ মনে করে অর্থনৈতিক উন্নয়নই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ২০২৩ সালে ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ লোক চায় যে তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিক।
চীন-তাইওয়ান সম্পর্ক এর চেয়ে অনেক পিছিয়ে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে। স্বল্প বেতন, বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠী ও শ্রমিকদের মধ্যে সবকিছুর উচ্চমূল্য ও বাড়ির মূল্য দিনদিন বেড়ে যাওয়া নিয়ে ব্যাপক হতাশা। সাই ইং-ওয়েন তার ২০১৫ সালের নির্বাচনি প্রচারণার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি ভালো দেশ গড়ার, কিন্তু অনেক ভোটারই মনে করে, তিনি সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি। ২০২২ সালের স্থানীয় নির্বাচনে ডিপিপি খুবই খারাপ ফলাফল করে, যাতে পার্টির প্রধান থেকে সরে যেতে হয় সাইকে। এর জন্য অনেকেই দায়ী করে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ডিপিপির ব্যর্থতায়। তাইওয়ানের যাদের বয়স ২০ বছর অথবা যারা এই দ্বীপে টানা ছয় মাস বসবাস করছেন তারা ভোট দেওয়ার যোগ্য হবেন। অর্থাত্ সম্ভাব্য ভোটার প্রায় ১৯ মিলিয়ন। গত নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি হার ছিল ৭৫ শতাংশ।
তাইওয়ান কি আত্মরক্ষায় সক্ষম?
চীনের সামরিক শক্তির মূল ফোকাস যদিও অন্যদিকে, কিন্তু যদি সব মিলিয়ে সক্রিয় সেনা সদস্যের সংখ্যা ধরা হয়, তাহলে দুই দেশের মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য পাওয়া যায়। যে কোনো সামরিক মোকাবিলায় চীনের সামরিক বাহিনীর সামনে তাইওয়ান খুবই ক্ষুদ্র মনে হবে। কিন্তু তার মানে এই না যে তাইওয়ানের যথেষ্ট অস্ত্র নেই বা তারা সম্পূর্ণ একা।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৯ সালে তাইওয়ান থেকে চীনকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিলেও তারা তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্টের আওতায় নিয়মিত এই দ্বীপরাষ্ট্রের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে এসেছে। ২০২৩ সালের জুলাইতে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে প্রায় ৩৪৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের অস্ত্র সহায়তার বিবরণ প্রকাশ করে। আর বছর শেষ হওয়ার ঠিক আগমূহুর্তে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট আরো ৩০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের যন্ত্রপাতি বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যাতে তাইওয়ান তাদের কৌশলগত তথ্য ব্যবস্থাপনা চালু রাখতে পারে। ২০২২ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যখন জিগ্যেস করা হয় যুক্তরাষ্ট্র কি তাইওয়ানকে সামরিকভাবে রক্ষা করবে, তিনি এর উত্তর দেন ‘হ্যাঁ’। পরে অবশ্য হোয়াইট হাউজ পরিষ্কার করেছে যে ওয়াশিংটন তাদের ‘এক চীন নীতি’ থেকে সরে আসেনি। তবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পর সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি অর্থব্যয় করে এবং নৌবাহিনী থেকে মিসাইল, যুদ্ধবিমান বা সাইবার হামলা সবকিছুতেই সামর্থ্যের প্রমাণ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
তাইওয়ান গোটা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন?
জাতিসংঘ তাইওয়ানকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না এবং সারা বিশ্বের মাত্র ১২টি দেশ এই স্বীকৃতি দিয়েছে (প্রধানত দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবীয় ও ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশ)। বিশ্বের বেশির ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যা আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করি—ফোন থেকে ল্যাপটপ, ঘড়ি, গেম কনসোল এসবই তাইওয়ানের তৈরি কম্পিউটার চিপসের সাহায্যে চলে। এদিক থেকে তাইওয়ানের শুধু একটা কোম্পানি দ্য তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফাকচারিং কোম্পানি বা টিএসএমসি—সারা বিশ্বের অর্ধেক বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। টিএসএমসিকে তাই বলা হয় ‘ফাউন্ড্রি’—এমন একটা কোম্পানি যারা চিপস ভোক্তা ও সামরিক ক্রেতাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটা বিরাট বড় শিল্প, ২০২১ সালের হিসাবে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বিগত বছরগুলোতে ওয়াশিংটন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য নানা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে প্রযুক্তিক্ষেত্রে চীনের প্রবেশাধিকার কমে আসে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানসহ তাদের মিত্ররা মাইক্রোচিপ তৈরিতে আরো এগিয়ে যেতে পারে। তাইওয়ানে চীনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা বেইজিংকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্পের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ এনে দিতে পারে।