জেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও
গত দুই সপ্তাহ ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হাড়কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এমন পরিস্থিতিতেও ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।আজ মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রয়েছে।
কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র ঠান্ডায়ও শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে দাঁড় করিয়ে পিটি করানো হচ্ছে। তবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ থাকলেও তা না করায় অনেক অভিভাবক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
লিমা আক্তার নামে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলে যাওয়া-আসার সময় প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাসে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।শিক্ষার্থীদের সুস্থ রাখতে কিছু দিন বিদ্যালয় বন্ধ রাখা প্রয়োজন বলে দাবি করেন এ অভিভাবক।
বিদ্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলার মিলনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হামিদ বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমেছে। কুয়াশার সঙ্গে অতিরিক্ত ঠান্ডা বাতাসে শিক্ষার্থীদের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না পাওয়ায় বিদ্যালয় খোলা রয়েছে।
গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান-ই-হাবিব বলেন, বিদ্যালয় খোলা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত। তীব্র শীতের কারণে অনেক অভিভাবকই স্কুল বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না পেলে স্কুল তো বন্ধ রাখা যায় না।একই কথা বলেন সদর উপজেলার ধন্দোগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুমা আখতারও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহীন আকতার বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ১০টার পর তাপমাত্রা দেখে বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সকাল ১০টার পর তাপমাত্রা মেপে ১১ থেকে ১২ ডিগ্রি পাওয়ায় বিদ্যালয় বন্ধের বিষয়টি ভাবা হয়নি। তবে, আজ বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩৯৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১২৫টি মাদরাসা, ৫৭টি কারিগরিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৫৭৮ জন। অন্যদিকে জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৯৯৮টি। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
এদিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৪৫টি শয্যার বিপরীতে ১৮০ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। গত কয়েক দিনে সর্দি-জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শয্যা সংকটের কারণে কোনো কোনো বেডে দুটি শিশুকে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বেডে জায়গা না পেয়ে অনেক রোগী ওয়ার্ড ও করিডরের মেঝেতে থাকছে।
হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সাজ্জাদ হায়দার শাহীন বলেন, শীতের এ সময়ে ভাইরাসের প্রবণতা বেড়ে যায়। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে শিশু ও বয়স্কদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।