তারা রোগী সেজে সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়ে মাদক নিয়ে দেশে ফিরতেন বিমানে

প্রকাশিত: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:
ব্যথানাশক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত ট্যাপেন্টাডল ওষুধকে দীর্ঘদিন ধরে মাদক হিসেবে সেবন ও বিক্রি করছে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরা। ২০২০ সালের ৮ জুলাই ট্যাপেন্টাডলকে ‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ঢাবির ফার্মেসি বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৬৫ ধারা অনুযায়ী ‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে ট্যাপেন্টাডলকে তফসিলভুক্ত করা হয়। মাদক হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও এটির বেচা-বিক্রি, চোরাচালান বন্ধ নেই। এমনই একটি মাদকের বড় চালানসহ মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সক্রিয় ৫ সদস্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) হাতে ধরা পড়েছে। মাদকের চালান নিয়ে বিমানযোগে দেশে ফিরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমকালে গ্রেফতার হন তারা। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ট্যাপেনটাডোল ট্যাবলেট উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়। সংস্থাটি বলছে, এ চক্রের সদস্যরা একজনকে রোগী সাজিয়ে সীমান্ত এলাকা দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যেতেন। এরপর সেখান থেকে বিমানে করে বিপুল পরিমাণ মাদক নিয়ে দেশে ফিরতেন তারা। প্রতি মাসে চক্রের সদস্যরা অন্তত চার-পাঁচবার এভাবে যাতায়াত করতেন। গ্রেফতাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা সোলাইমান (৪৪), হৃদয় ইসলাম রাজু (২৯), এ কে এম আবু সাইদ (৪৭), আশীক সাইফ (৩৬) ও মো. ফারুক। আজ বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় অধিদপ্তরের মেট্রো উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটওয়ারী।


তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল একটি চক্র পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ফেনসিডিল ও ট্যাপেনটাডোলের বড় চালান বিমানযোগে এনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। চক্রের মূলহোতা সোলাইমান প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ বার কলকাতায় যাতায়াত করতেন। এরপর বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে ট্যাপেনটাডোলসহ অন্যান্য অবৈধ মাদক দেশে নিয়ে আসতেন। এ কাজে তিনি তার একাধিক সহযোগীকে ব্যবহার করতেন। গত আগস্ট মাসে এ চক্রের একজন সদস্যকে ফেনসিডিলসহ বিমানবন্দরে গ্রেফতার করা হয়।


সংস্থাটির ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, চক্রের সদস্যরা মূলত দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে রোগীর চিকিৎসার কথা বলে ভারতে যেতেন। এরপর কয়েকদিন অবস্থান শেষে বিপুল পরিমাণ মাদক ও অবৈধ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ফিরতেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের (উত্তর) উপ-পরিচালক (ডিডি) রাশেদুজ্জামানের তত্ত¡াবধানে সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে একটি দল হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল এলাকায় অবস্থান নেয়। চক্রের সদস্যরা এ্যারাইভাল ইন্ট্রিগেট দিয়ে প্রবেশের সময় সোলাইমান ও সহযোগীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতো। ইমিগ্রেশন শেষে ল্যাগেজ বেল্ট থেকে তাদের লাগেজ সংগ্রহ করে কাস্টমস চেকিংয়ের কার্যক্রম শেষ করে। সেখান থেকে বের হয়ে গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার সময় চক্রের পাঁচজনকে লাগেজসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে সবার ব্যাগ তল্লাশি চালিয়ে ৪২ হাজার ২০০ পিস নিষিদ্ধ ‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে ট্যাপেনটাডোল ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান সংস্থাটির ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটওয়ারী।