বিনোদন ডেস্ক:
আলাদা গায়কী, অভিনয় আর ব্যক্তিত্বে কোনো অংশেই কমতি ছিল না তাঁর। বহু বছর কমতি ছিল কেবল নিজ ঘরে চাঁদের আলোর! তাই তো নিজের গাওয়া ‘আলো, আলো আমি কখনও খুঁজে পাবো না চাঁদের আলো, তুমি কখনও আমার হবে না’– এমন গানের মতোই হয়ে উঠেছিল তাহসানের যাপিত জীবন। ভক্ত অনুরাগীরাও এ গানের কথাকে গায়কের জীবনের প্রতিচ্ছবি ভাবতে শুরু করেছিলেন। মানুষ একা বাঁচতে পারে না। তিনি তাহসান হোক কিংবা অন্য কেউ। তাহসান তাই একাকিত্ব ভাঙলেন। বিয়ে করলেন আমেরিকা প্রবাসী মেকআপ আর্টিস্ট রোজা আহমেদকে; যে রোজা তাহসানকে দিয়েছেন বিশ্বাস, সম্মান ও বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি। দিয়েছেন আলো ঝলমলে ঘর। তাই তো জীবনের নতুন এ অধ্যায় নিয়ে জানতে চাইলে শব্দ কম খরচ করে দুই শব্দে জানিয়ে দিলেন, এখনকার অনুভূতিটা অসাধারণ।
নিজেদের পছন্দের পোশাকেই বিয়ে
তাহসানের সঙ্গে রোজার গায়ে হলুদের ছবি প্রকাশ হয় ৪ জানুয়ারি। এরপরই ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়। সেদিন সন্ধ্যায় বিয়ের ছবির সঙ্গে কবিতা ক্যাপশন দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেন সুখবর। সুখবরের বাইরে ব্যক্তিগত এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেয়ে অনুভূতি নিয়েই থাকতে চাইলেন। তাহসানের ভাষ্য, ‘আমি একজন সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে কথা বলে ন্যাশনাল ইস্যু হতে চাই না।’ এরপর নবদম্পতি নিয়ে যা জানা গেল, তা হলো রোজার সঙ্গে চার মাসের পরিচয় তাহসানের। একে অপরকে চিনতে যথেষ্টই এ সময়। তারা একে অপরকে এ সময়ের মধ্যে চিনেছেন, জেনেছেন, পরে দু’জনই নিজেদের পছন্দের কথা একে অন্যকে জানান। এরপর তো পারিবারিকভাবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়। উভয়ে নিজ নিজ পছন্দের পোশাক পরে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন। ঘরোয়া আয়োজনে হয় সে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। অবশ্য বিয়ের বড় এক আয়োজন করার ইচ্ছেও রয়েছে তাদের। সেটি দেশে না যুক্তরাষ্ট্রে, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তার আগেই নবদম্পতি সূর্যময় দ্বীপরাজ্য মালদ্বীপে মধুচন্দ্রিমার বিশেষ মুহূর্ত কাটাতে উড়ে গেছেন।
শুধু তাহসানের আলো নয়…
বিয়ের পর রোজাকে সবাই তাহসানের আলো হিসেবে দেখছেন; যে আলো তাহসানের একাকী জীবনকে আলোয় আলোয় ভরিয়েছেন। তাহসানপতœীর বাইরেও রোজার দারুণ পরিচয়। বরিশালের মেয়ে তিনি। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে কসমেটোলজিতে পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনা শেষ করে কসমেটোলজি লাইসেন্স গ্রহণ করেন। পরে নিউইয়র্কের কুইন্সে রোজাস ব্রাইডাল মেকওভার প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি রোজা রূপচর্চা নিয়ে নিয়মিত কনটেন্টও বানান। রোজা আহমেদ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্রাইডাল মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এ ছাড়াও মেকআপ শিক্ষক হিসেবে তিনি নারীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং অনেককে উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করেছেন।
অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছেও ছিল। মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত রোজার ইচ্ছা ছিল মিডিয়াতে কাজ করা; সেটি হয়নি। হয়েছেন মেকআপ আর্টিস্ট। নিজের জীবনের গল্প তুলে ধরে রোজা বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল মিডিয়াতে কাজ করার। অভিনেত্রী হওয়ার। আমি ভালো নাচ করতাম। স্কুল-কলেজে বহু নাচের অনুষ্ঠানে অংশও নিতাম। ভালো ছবিও আঁকতাম। বাবা মারা যাওয়ার পর এ পথে আর হাঁটা হয়নি। পরিবার থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় তুমি আর এগুলো করতে পারবে না। তাই আর করা হয়নি।’ শোবিজে কাজ করার বাসনা থাকলেও সেটি পূরণ হয়নি রোজার। অভিনেত্রী না হয়েও আজ তিনি তারকা হয়ে উঠেছেন।
গান নিয়েই থাকতে চান
বিয়ের পর বেশ প্রফুল্লচিত্তে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তাহসান। তখনও হাতের মেহেদি শুকায়নি। বাঁ হাতের তালুতে মেহেদিতে লেখা ছিল ইংরেজি ‘আর’ অক্ষর; যা নবপরিণীতার নামের প্রথম অক্ষর। অবশ্য গানের জন্যই মিডিয়ার সামনে আসা তাঁর। নিজের লেখা ও সুরের ‘একা ঘর আমার’ গান প্রকাশের দিনে সবাইকে জানিয়ে দিলেন, ‘‘মানুষ হিসেবে আমি বেশ সাধারণ। গান নিয়েই থাকতে চাই আজীবন। প্রতিবছরই কাজের পরিকল্পনা করি। এ বছর অনেক বেশি গানের পরিকল্পনা করেছি। এর মধ্যে চারটা গান করেছি। ‘একা ঘর আমার’ প্রকাশিত হলো। গানটি বেঁচে থাকবে। গানটি হয়তো দেশজুড়ে তোলপাড় করবে না, তবে বেঁচে থাকবে। আমিও এ গানের মাধ্যমেই বেঁচে থাকতে চাই।’’