নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবস আজ। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন আখড়ায় শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান ও মেলা। এতে থাকছে লালনের দর্শন ও জীবনাদর্শ নিয়ে আলোচনা, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও চিরচেনা গ্রামীণ মেলা। অনুষ্ঠানকে ঘিরে লালন আখড়া চত্বরে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব।
বৃহস্পতিবার (১ কার্তিক) সন্ধ্যায় উদ্বোধনী দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্র্বতী সরকারের মৎস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মিজ্ ফরিদা আখতার। গেস্ট অব অনার হিসাবে থাকবেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মুহাম্মদ নসরুল্লাহ,কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার উপস্থিত থাকবেন। এতে প্রধান আলোচক থাকবেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশিদুজ্জামান
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। বিশেষ অতিথি সাবেক এমপি সৈয়দমেহেদী আহমেদ রুমী, সমাজসেবক মোঃ শেখ সাদী ও সাবেক পিপি এ্যাডভোকেট গোলাম মহম্মদ। এতে স্বাগত বক্তা থাকবেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মিজানুর রহমান।
তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ। বিশেষ অতিথি খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, বিজিবি ৪৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মাহবুব মোর্শেদ, সাবেক এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন। এতে প্রধান আলোচক থাকবেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক এ্যাডভোকেট লালিম হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত ডিসি শারমিন আখতার।
অনুষ্ঠান শুরুর এক সপ্তাহ আগেই আখড়া-বাড়িসহ কালি নদীর তীরে বাউল ফকিরদের ভিড় জমেছে। আখড়া চত্বর এখন কানায় পূর্ণ ও মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রতি বছরের মত এবারও দেশী-বিদেশি পর্যটকসহ বাউল, ভক্ত-শিষ্যসহ হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমনে লালন আখড়া চত্বর মহামিলনের উৎসবে পরিণত হবে বলে লালন একাডেমীর সভাপতি ভারপ্রাপ্ত ডিসি শারমিন আখতার জানান।
আধ্যাত্মিক সাধক ফকির লালনের প্রতি অকৃত্রিম ভক্তি, গান উপভোগ ও তার রহস্যময় অজানা কীর্তি জানার জন্যই এখানে অনুষ্ঠান চলাকালে দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ দুর-দূরান্তের হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন।
সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফকির লালনের দর্শন নিয়ে আলোচনার পর শুরু হবে লালন গীতির জমকালো সঙ্গীতানুষ্ঠান। লালন একাডেমীর শিল্পীসহ সঙ্গীত জগতের নামকরা শিল্পীরা গানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান।
ফকির লালনের প্রধান কীর্তি হচ্ছে তার গানের কথা ও সুর। তিনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে গানের মাধ্যমে মানব প্রেম ও মানবতার জয়গান গেয়ে গেছেন। তার গানের অন্তর্ময় মানবপ্রেম মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তার মানবতাবাদী গানের কথা ও অর্ন্তময় মানব প্রেমের টানে প্রতি বছর অুনষ্ঠিত তিরোধান দিবস ও স্মরনোত্সব এই দুটি অনুষ্ঠানেই ছেঁউড়িয়ার লালন মাজারে দেশী-বিদেশ পর্যটকসহ লাখো জনতার ঢল নামে।
১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর (বাংলা ১ কার্তিক, ১২৯৭ সাল ) ১১৬ বছর বয়সে ফকির লালন দেহ ত্যাগ করন। মৃত্যুর পর তার ইচ্ছানুযায়ী লালন একাডেমি চত্বরে পালক মাতা মতিজান ফকিরানীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।