তিব্বতে ভূমিকম্প: প্রতিকূল আবহওয়ায় রাতেও জীবিতদের খোঁজে উদ্ধারকর্মীরা

প্রকাশিত: ১:২২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

 

চীনের তিব্বতের হিমালয় পর্বতমালার কাছে প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে মঙ্গলবার যে ভূমিকম্প হয়েছে, তাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৬ জনে দাঁড়িয়েছে। ওই অঞ্চল থেকে চারশ’রও বেশি মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়া জীবিতদের খোঁজে প্রতিকূল আবহাওয়ায় রাতেও কাজ করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। এতে ১৪ হাজারের বেশি উদ্ধারকর্মী দিনরাত অব্যাহতভাবে কাজ করছেন।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি বলছে, মঙ্গলবারের ভূমিকম্পটি মাউন্ট এভারেস্টের ভিত্তি থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে আঘাত হানে। এতে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। ভাইস-প্রিমিয়ার ঝাং গুওকিং বুধবার অপারেশনটি তদারকি করতে এসেছিলেন, যা শীতের তাপমাত্রা রাতারাতি ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাওয়ার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ঘটনাস্থলে রাতে তাপমাত্রা মাইনাস ১৬ সেন্টিগ্রেড হওয়ার পূর্বাভাস ছিল। চীনের জলবায়ু প্রশাসন জানিয়েছে, রাত নাম আগেই ডিংরি কাউন্টিতে তাপমাত্রা মাইনাস ৮ সেন্টিগ্রেড ছিল। এই চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি জীবিতদের জন্য অতিরিক্ত আরেকটি চাপ হয়ে এসেছে।

বিবিসি জানায়, তিব্বতে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ, যা বেইজিং দ্বারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। সাংবাদিকরা সরকারি অনুমতি ছাড়া সেখানে যেতে পারছেন না। ভূমিকম্প এবং এর পরবর্তী পরিণতি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে, তার বেশিরভাগই চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া থেকে।

চায়না আর্থকোয়েক সেন্টারের তথ্য অনুসারে, ভূমিকম্পটি চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিজাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৫ মিনিটে আঘাত হানে। এর কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিগাতসে শহরের দিংরি কাউন্টির চসগো টাউনশিপ। ভূমিকম্পটির উপকেন্দ্রের ২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ২৭টি গ্রাম আছে এবং এসব গ্রামে প্রায় ৬ হাজার ৯০০ মানুষ বসবাস করে।

প্রাথমিক জরিপ অনুসারে, এসব গ্রামের ৩ হাজার ৬০৯টি বাড়ি ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে শিগাতসে শহরের প্রশাসন। তারা আরও জানিয়েছে, ৪০৭ জন আটকে পড়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ৩০ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।

ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষে কারণে চীনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল, নেপাল ও ভারতের উত্তরাঞ্চলে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। তিব্বতের হিমালয় অঞ্চলটি একটি বড় ধরনের ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইনের উপর অবস্থিত। ফলে ভূমিকম্প এখানে একটি সাধারণ বিষয়, কিন্তু তারপরও মঙ্গলবারেরটি চীনে কয়েক বছরের মধ্যে হওয়া অন্যতম প্রাণঘাতী ভূমিকম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। এটি তিব্বতের প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান, ভারতের উত্তরাঞ্চল ও বাংলাদেশেও অনুভূত হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম সিসিটিভিতে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে তিব্বতের পবিত্র শহর শিগাৎসিতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি ও ধসে পড়া ভবন দেখা গেছে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছেন আর স্থানীয়দের ভারী কম্বল বিতরণ করছেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রাণহানি কমাতে সর্বাত্মক উদ্ধার অভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের নিদেশ দিয়েছেন তিনি।