দখল-চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া বিএনপির নেতা-কর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধার দোকানে দলীয় কার্যালয়

প্রকাশিত: ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

নেত্রকোনা প্রতিনিধি:

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। চাঁদা দাবি, বাজার দখলসহ তারা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধার দোকান দখল করে দলীয় কার্যালয় স্থাপনেরও অভিযোগ উঠেছে।

দোকান দখলের বিষয়ে বুধবার নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন মোহনগঞ্জ উপজেলার পালগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিনহাজ উদ্দিন দুলাল। যার অনুলিপি দিয়েছেন নেত্রকোনা সেনা ক্যাম্প, মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মোহনগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা ক্যাম্প কর্মকর্তার কাছে।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মোহনগঞ্জ উপজেলার সোয়াইর ইউনিয়নের আদর্শনগর বাজার থেকে আগের ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে বাজারটি দখলে নেন তারা। এই বাজারে ব্যবসা করেন অর্ধশত মানুষ। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের লোকজনও আছেন। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বাজারের টোল আদায় করছে বিএনপির লোকজন। তাদের কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, দখল ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন সোয়াইর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক জামাল মিয়া ও সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম। তারাই ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বাজারছাড়া করেছেন। এমনও শোনা যাচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদের কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রেও হস্তক্ষেপ করছেন তারা। তাদের কথায় বয়স্কভাতার কার্ড, নলকূপ বিতরণ করতে হবে বলে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বলছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য সম্প্রতি পরিষদে ৮টি নলকূপ বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে ৪টি নিয়ে গেছেন বিএনপি নেতারা। এমনকি ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগও রয়েছে। এ ছাড়া সোয়াইর ইউনিয়নের পালগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিনহাজ উদ্দিন দুলালের দোকানঘর দখলে নিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাঁর দেকানের জায়গায় ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি কার্যালয়ের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলে মিনহাজ উদ্দিনকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
সোয়াইর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তফা জামিল স্বপন জানান, ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক জামাল মিয়া ও সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম আদর্শনগর বাজার দখলে নিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের বাজার থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। শুধু বাজার দখল করেই ক্ষান্ত হননি, এলাকার সাধারণ মানুষের ওপরও অত্যাচার করছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সোয়াইর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক জামাল মিয়া। তাঁর দাবি, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। বাজার দখল করেননি বা কউকে বাজার থেকে তাড়িয়েও দেননি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আগে যারা বাজারে চাঁদা তুলত, তারা নিজে থেকে সরে গেছে। আগে যারা বাজারের টোল আদায় করত, তারা বলছে নতুন করে সবাই মিলেমিশে কাজ করার কথা। বীর মুক্তিযোদ্ধার দোকান দখলের বিষয়টিও ঠিক নয়। জায়গাটি নিজেদেরই দাবি করেছেন এই বিএনপি নেতা।

সোয়াইর ইউপি সদস্য হারিছ মিয়ার ভাষ্য, ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দের ৮টি নলকূপের মধ্যে ৪টি বিএনপি নেতারা তাদের লোকজনকে দেবেন বলে নিয়ে গেছেন। আগামী দিনে কোনো কাজ করতে হলে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলেছেন। চেয়ারম্যানের কাছেও চাঁদা দাবি করা হয়েছে বলে শুনেছেন তিনি।

তবে সোয়াইর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, ‘আমার কাছে সরাসরি চাঁদা দাবি করেনি। তবে লোকজনের সঙ্গে চাঁদা দেওয়ার কথা বলাবলি করেছে। বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি।’
মোহনগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সেলিম কার্নায়েন জানান, আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আদর্শনগর বাজার লুটেপুটে খেয়েছেন। সরকার পরিবর্তনের পর তারা বাজারের দায়িত্ব অন্যদের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে বাজার পরিচালিত হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধার দোকান দখলের ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ হয়ে থাকলে প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরীর সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি বা অন্যের জায়গা দখল করা ঠিক নয়। কেউ যদি এ কাজে জড়িত হয়, তার দায় তাকেই নিতে হবে, বিএনপি এর দায় নেবে না।

মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ানা কবির বলেন, আদর্শনগর বাজার নিয়ে সমস্যা ও বীর মুক্তিযোদ্ধার দোকান দখলের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।