দলবদলের মধ্যেই ২ রাউন্ড, ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে নিরুপায় ক্লাবগুলো
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ক্রীড়া ডেস্ক:
চলমান মৌসুমের দুর্বলতা কাটানো ও আরো দলীয় শক্তি আরো বৃদ্ধি করতে মধ্যবর্তী দলবদল ফুটবলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলেও রয়েছে মধ্যবর্তী দলবদল। পেশাদার লিগের বিগত আসরগুলোতে মধ্যবর্তী দলবদলের পরই দ্বিতীয় লেগ শুরু হয়েছে। এবার বাফুফে আকস্মিকভাবে লিগের মাঝপথে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মধ্যবর্তী দলবদল চলাকালেই দ্বিতীয় লেগের দুই রাউন্ড খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশ্বেরর শীর্ষ লিগগুলোতে বটেই, এমনকি এশিয়ার অনেক দেশেও উইন্ডো চলাকালে খেলা চলে। এমন সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলাদেশের এবারই প্রথম পরিচয় ঘটায় ক্লাবগুলো খানিকটা বিরুপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। ব্রাদার্স ইউনিয়নের ম্যানেজার আমের খান এই সম্পর্কে বলেন, ‘ফেডারেশন ফুটবলের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। ক্লাবগুলো দেশের ফুটবলের উন্নয়নের জন্যই কাজ করে। এই সিদ্ধান্তটি ক্লাবগুলোকে ডেকে আলোচনার মাধ্যমে করলে আরো সুন্দর ও যৌক্তিক হতো।’
ক্লাবগুলো তো দূরের কথা, বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটিই এই সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সভা করেনি। মধ্যবর্তী দলবদলের মধ্যে খেলা ও সূচি পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও সভা না হওয়ায় লিগ কমিটির একাধিক সদস্য বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কম্পিটিশন ম্যানেজার ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিদের পরিবর্তনের বিষয়ে শুধু মৌখিকভাবে অবহিত করেছিলেন। পেশাদার লিগ ও জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান যৌথ আলোচনা করেই মুলত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশ্বস্ত সুত্রের খবর, জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যানের অনুরোধের প্রেক্ষিতেই লিগে পরিবর্তন এসেছে তাই চিঠিতে জাতীয় দল কমিটির স্বাক্ষরও রয়েছে।
ক্লাবগুলোতে পাঠানো চিঠিতে এই পরিবর্তনের জন্য জাতীয় ফুটবল দল ও ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থের কথা উল্লেখ রয়েছে। জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। ফেডারেশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির স্বাক্ষর চিঠিতে থাকায় ক্লাব সংশ্লিষ্ট অনেকেই তাই সরাসরি মন্তব্য করেননি কোড অফ কন্ডাক্টের কারণে এবং সভাপতির বিরাগভাজন এড়াতে। ফেডারেশন ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্লাবগুলোকে অবহিত করেছে এতে বিরক্ত হয়ে অনেকে এই বিষয়ে আলোচনা করতেও আগ্রহী নন, ‘ফেডারেশন তো চিঠি দিয়েই দিয়েছে। এখন আর মতামত বা আলোচনার কিছু নেই। চিঠি অনুযায়ীই খেলতে হবে কি আর করার।’
অনেকে আবার ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের পরোক্ষ সমালোচনা করে বলছেন, ‘জাতীয় দলের ২৫ মার্চ খেলা এটা আগে থেকেই জানা। প্রথম পর্বের ফিকশ্চারের সময় মধ্যবর্তী দলবদল,জাতীয় দলের প্রস্তুতির বিষয়টি ভাবা উচিত ছিল। প্রথম লেগের ছয় ম্যাচ পর এসে এমন সিদ্ধান্ত পরিকল্পনাহীনতারই বহিঃপ্রকাশ।’
আগের সূচি অনুযায়ী প্রথম লেগ ২৫ জানুয়ারি শেষে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ মধ্যবর্তী দলবদল হওয়ার কথা ছিল। জাতীয় দলের ২৫ মার্চ ম্যাচ ও ঈদের পর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে দ্বিতীয় লেগ শুরু হওয়ার কথা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যবর্তী দলবদল। ১৬, ১৭ দ্বিতীয় লেগের প্রথম এবং ২১,২২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় লেগের দ্বিতীয় রাউন্ড। এই দুই ম্যাচের জন্য ক্লাবগুলোকে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে খেলোয়াড় তালিকা প্রদান করতে হবে।
ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক ক্লাবই ভোগান্তির সম্মুখীন হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্লাব কর্মকর্তার মন্তব্য, ‘আমরা মার্চের শেষে বিদেশি খেলোয়াড় আনার পরিকল্পনা করছিলাম। এখন দুই ম্যাচের জন্য ফেব্রুয়ারিতেই বিদেশি খেলোয়াড় আনতে হবে। দুই ম্যাচ দলবদলের মধ্যে দেয়ায় ক্লাবগুলোকে বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য দেড় মাসের অতিরিক্ত বেতন দিতে হবে। ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে এক দিকে খরচ বাড়ছে আরেক দিকে ফেডারেশন থেকে আমরা এখনো কোনো আর্থিক সাহায্যই পাইনি।’
কর্মকর্তারা আর্থিক বিষয় দেখলেও কোচরা দেখেন ফুটবলারদের সমন্বয়। ২৫ জানুয়ারি প্রথম লেগ শেষ হচ্ছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিদেশি খেলোয়াড় আনা কঠিন। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিদেশি খেলোয়াড় আসলেও ১৬-১৭ ফেব্রুয়ারিতে ম্যাচ খেলানোর আগে অনুশীলন ও সমন্বয়ের জন্য খুব স্বল্প সময়।
৫ আগস্ট পরবর্তী ঘটনায় অনেক ক্লাব এবার প্রথম লেগের সময় ভালোমতো দল গঠন করতে পারেনি। সেই সময় ক্লাবগুলোর দাবি ছিল দলবদলের সময় বৃদ্ধি। তখন ফেডারেশন কর্তারা ফিফার কথা শুনিয়েছিলেন। এখন ক্লাবগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা না করেই মধ্যবর্তী দলবদলের সময়সূচি পরিবর্তনের জন্য ফিফায় আদৌ যোগাযোগ করেছে কিনা ফেডারেশন এটা যেমন প্রশ্ন আর যদি করেই থাকে তাহলে কেন ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই?