বিনোদন ডেস্ক:
কোভিডের সংক্রমণ কমলেও, তখনও কেটে যায়নি আতঙ্ক। হাসপাতাল থেকে ইশানকে বাড়ি নিয়ে এলেন অভিনেত্রী নুসরাত জাহান। দিনে পাঁচ বার শুধু বাড়ি পরিষ্কার চলত সেই সময়। এমনকী বাচ্চার ঘরের দিকে খুব একটা লোকজন যেতেন না। তাই মানুষের ছোঁয়া থেকে খানিক দূরে ছিল নুসরাত পুত্র।
অভিনেত্রীর কথায়, ‘এই তো সেদিন তোকে কোলে করে নিয়ে এলাম। এর মধ্যেই কেমন বড় হয়ে গেলি বলতো…।’ রাতারাতি একটা ছোট্ট বাচ্চা কীভাবে তাঁকে পরিপূর্ণ করেছে সে বিষয়েই কথা বলেছেন অভিনেত্রী।
ছেলের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ নুসরাত। বললেন, ‘সিজার হওয়ায় হাসপাতালে ওকে একমাত্র ফিডিংয়ের সময় কাছে পেতাম। প্রথম যখন কোলে পাই তখন তো মা হয়ে উঠিনি। একজন শিশুকে কীভাবে দুধ খাওয়াতে হয়, কিছুই জানতাম না। যশ আমাকে এতটাই সাহায্য করেছে বলে বোঝাতে পারব না। আর সঙ্গে ছিলেন আমার মা। ছোট বাচ্চা কখন ঘুমাবে, কখন উঠবে সেটা বোঝা খুব মুশকিল হয়ে উঠত। প্রতিটি মায়ের অভিজ্ঞতা আসলে আলাদা হয়। আমারও তেমন সকলের থেকে অন্যরকম।’
বাচ্চাকে পাশে নিয়ে ঘুমানোর সময় প্রতিদিন নানা রকমের নতুন অভিজ্ঞতা হতো তার। দুধ খাওয়ানোর জন্য নাকি অ্যালার্মও দেওয়া থাকত অভিনেত্রীর। নুসরাত বলেন, ‘কখনও ঘুমের মধ্যে মনেও নেই হয়তো অ্যালার্ম বন্ধ করে দিয়েছি। আবার ধড়পড় করে উঠে বসতাম। আমি আর যশ সময় ভার করে নিয়েছিলাম। সারারাত ব্রেস্ট ফিডিং করার পর আমি যখন ভোরের দিকে একটু ঘুমাতাম, তখন যশ ওকে নিয়ে বসে থাকত।’
দেখতে দেখতে সাড়ে তিন বছর বয়স হয়ে গিয়েছে ইশানের। তার এখন নানা ধরনের প্রশ্ন মনে। অভিনেত্রীর কথায়, ‘খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল। স্কুলে যখন যাচ্ছে ইশান, ও তো বুঝতে পারছে না, ঠিক কী হতে চলেছে। আমার তো উদ্বেগ-চিন্তায় ওষ্ঠাগত প্রাণ। সবাই আমাকে বোঝাতে থাকে, এটা খুব সাধারণ একটা বিষয়। বাচ্চারা স্কুল যাওয়ার সময় কাঁদবেই। আমার কিছুতেই মন মানছে না। স্কুলের বাইরে সাতদিন টানা বসে থাকতাম। শুনতে পাচ্ছি তো ভেতরে কাঁদছে। যখন দেখলাম আর কাঁদছে না, তখন থেকে আর বসতাম না।’
তবে গর্বের সঙ্গে অভিনেত্রী বললেন, তিনি শুধুই ইশানের মা নন। তার জীবনে আরও এক সন্তান রয়েছে। যশের প্রথম ছেলে রিয়াংশ। ‘আমরা মানুষ হিসেবে অনেক কিছু জটিল করে থাকি, একটু মানবিকতা দিয়ে ভাবলে এমনটা কখনওই হয় না। আমাদের পরিবারে আলাদা করে দুই ছেলেকে কখনওই ভাবা হয় না। যশের দুই ছেলে ওর জীবন। কোনও তফাৎ নেই। আমাদের বাড়িতে কিন্তু দুটো পোষ্যও রয়েছে। ওরাও আমাদের সন্তান।’
তবে পাশে যশকে পেয়েছেন সবসময়। নুসরাতের কথায়, ‘আমি কোনওদিন বলতে পারব না যে মায়ের কাজ সবচেয়ে উপরে। আদর-যতœ, লালন-পালন সবটা মা করেন সেটা যেমন ঠিক। তেমনই জীবনের অনেক পাঠ শিখিয়ে দেন বাবা। ইশান পড়ে গেলে আমি দৌড়ে গিয়ে তুললেও, যশ ওকে শেখায় কী ভাবে নিজে থেকে উঠে দাঁড়াতে হয়। একজন মা এবং বাবার আলাদা ভূমিকা থাকে জীবনে, যেটা শিক্ষণীয়।’
নুসরাতের কথায়, ‘আমি ওদের আদরের জায়গা, আর যশ ওদের নিরাপত্তা। সবাই কিন্তু বাবাকেই ভয় পায়। আর আমি বন্ধু। মজার বিষয় হলো, রিয়াংশ সবসময় ইশানকে অত্যন্ত আগলে রাখে। ওদের রক্তের টান। যেটা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি বা যশ যখন সবকিছু থেকে একটু ব্রেক নিতে বাইরে যাই, দু’জন বাচ্চা একে অপরকে আগলে রাখে।’