দুই দফা সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি গোমতী সেতুর কাজ

প্রকাশিত: ১০:২১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২৪

কুমিল্লা প্রতিনিধি:

দু’দফায় সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি কুমিল্লার গোমতী সেতুর নির্মাণকাজ। এ সেতুর নির্মাণকাজ এক মাস করলে পরের দুই মাস থাকে বন্ধ। এভাবে চলে গেছে প্রায় চার বছর। এতে সেখানকার অন্তত ৩০টি গ্রামের বাসিন্দার দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।
এলজিইডির অর্থায়নে দাউদকান্দি উপজেলার সদর উত্তর ইউনিয়নের গোমতী নদীর ওপর ৫৭০ মিটার দীর্ঘ কদমতলী-হাসনাবাদ সেতুর কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৯ সালের শেষ দিকে। এরই মধ্যে দু’দফায় সময় বাড়ানো হলেও কাজের বড় কোনো অগ্রগতি নেই। শেষ কবে ওই সেতুর কাজ হয়েছে, তাও স্থানীয়রা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। এতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যমতে, ২০১৯ সালে ৫৮ কোটি ৭৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে কুমিল্লার মঈনউদ্দিন ও মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজের (জেভি) যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওই গোমতী সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে দু’দফায় সময়
বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে সেতুর কাজ সম্পন্ন করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সেতুর ১৫২টি পাইলের মধ্যে ১৪১টির কাজ শেষ হলেও ১১টি পাইল নির্মাণসহ সেতুর অবকাঠমোর আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, সেতুর নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে রড ও ঢালাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানিতে নষ্ট হচ্ছে সেন্টারিংয়ের মালপত্র।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত করোনার অজুহাতে কাজ বন্ধ রাখা হয়। জুলাই মাস থেকে ধীরগতিতে কাজ শুরু হয়। পরে আবার মাঝেমধ্যে বন্ধ রেখে কাজ করা হয়। এখনও সেতুর অর্ধেক কাজ বাকি। সময় মতো সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় দাউদকান্দি সদর উত্তর ইউনিয়নসহ তিতাস ও মেঘনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সেতু চালু না হওয়ায় দাউদকান্দি উপজেলার হাসনাবাদ ভিটিকান্দি, কান্দারগাঁও, বাহেরচর, বাজরা, বটতলী ও গঙ্গাপ্রসাদ; তিতাস উপজেলার দুধঘাটা, দড়িগাঁও, চরকাঁঠালিয়া, কাকিয়ালী, মোহনপুর, উজিরাকান্দি, সাতানী, চারআনি, নন্দীরচর, মঙ্গলকান্দি, বারকাউনিয়া, কালীরবাজার, ভূঁইয়ার বাজার, নন্দনপুর, বালুয়াকান্দি, জগতপুর ও চরকুমারিয়া এবং মেঘনা উপজেলার আলীপুর, বিনোদপুর, চরবিনোদপুর ও হিজলতলী গ্রামের মানুষ নৌকা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে গোমতী নদী
পারাপার হচ্ছে।
দাউদকান্দির বাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, সময় মতো কাজ করলে এই সেতুর নির্মাণ অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু উপজেলা সদর থেকে উত্তর ইউনিয়ন এবং তিতাস ও মেঘনা উপজেলার কিছু অংশে যেতে এখন নির্ভর করতে হয় খেয়া নৌকার ওপর। এতে সময় অপচয় হওয়ার পাশাপাশি দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য, ব্যবসায়ীদের মালপত্র আনা-নেওয়ায় ভোগান্তির শেষ নেই।
বাহেরচর ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আলিম জানান, গ্রামের লোকজন ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য সেতুটি দ্রুত নির্মাণ করা জরুরি।
মোহনপুর গ্রামের ব্যবসায়ী নাসির মুন্সী বলেন, সেতু না থাকায় নৌকায় নদী পার হতে অনেক সময় চলে যায়। ঠিকমতো নৌকা পাওয়াও কঠিন।
সাবেক ইউপি সদস্য ও চারআনী হাসনাবাদ গ্রামের মনু মিয়া জানান, এ সেতু নির্মিত হলে উপজেলা সদর উত্তর ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ২৫-৩০টি গ্রামের বাসিন্দার যাতায়াতের সমস্যা দূর হবে। সাশ্রয় হবে অর্থ ও সময়ের।
সময়মতো কাজ না হওয়ার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী নাঈমুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন করোনা মহামারি এবং কয়েক দফায় বন্যার কারণে প্রকল্প এলাকায় কাজে সমস্যা দেখা দেয়। এখন নতুন করে কাজ শুরু করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে এলজিইডির দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী স্নেহাল রায় সমকালকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আর সময় দেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার গত বৃহস্পতিবার নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন এবং প্রকল্প এলাকায় কাজ শুরুর জন্য নির্মাণসামগ্রী নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের বর্ধিত সময় অনুসারে ২০২৫ সালের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে বিধি অনুযায়ী তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হবে।