জেলা প্রতিনিধি ঈশ্বরদী (পাবনা)
পাবনার ঈশ্বরদীতে দুই বছর ধরে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ১০ গ্রামের মানুষ। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণাধীন সেতুর রডে মরিচা ধরে গেছে। সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের চরকুড়লিয়া গ্রামে পদ্মার শাখা নদীর ওপর ২০২১ সালে ৪ এপ্রিল আট কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত পিলার বসানো ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি। এরইমধ্যে ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের সময় বাড়ানো হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, পদ্মার বিস্তীর্ণ চরজুড়ে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত সবজি, ফসল এ পথে ঈশ্বরদী ও পাবনা শহরে আনা-নেওয়া করা হয়। সেতু না থাকায় বর্ষাকালে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা ও ভেলায় চড়ে নদী পারাপার হতে হয়। শুকনো মৌসুমে নদীর ঢালু পাড় দিয়ে গরুর গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ফলে ফসল আনা-নেওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে লক্ষ্মীকুন্ডার বেশ কয়েকটি গ্রাম ছাড়াও পদ্মার তীরবর্তী পাবনা সদর উপজেলার চরভবানীপুর গ্রাম ও কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের সাত গ্রামের মানুষের যাতায়াতের পথ সুগম হবে।
ঈশ্বরদী এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, যশোরের আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড এ সেতু নির্মাণের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হলেও সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছেন ফুল মিয়া, জয়, নুরুজ্জামান খোকনসহ কয়েকজন ঠিকাদার। ঠিকাদারদের দাবি, রড, সিমেন্টসহ সবধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি ও করোনার কারণে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ওমর ফারুক প্রামাণিক জানান, সেতুটি নির্মাণ শুরুর ছয় মাস পর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রায় তিন বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত কয়েকটি পিলার ছাড়া সেতুর আর কোনো কাজ হয়নি।
চরকুড়লিয়া গ্রামের কৃষক হাশেম আলী বলেন, ‘বর্ষাকালে নদীতে ডুবো পানি থাকে। কখনো ভেলা আবার কখনো সাঁতার কেটে নদী পাড়ি দিয়ে ওপারে যেতে হয়। ওপারে হাজার হাজার একর জমিতে ফসল হয়। এসব ফসল এ পথে দিয়ে আনতে হয়। এতে আমাদের অসহনীয় কষ্ট হয়। এটা নিজ চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না।’
একই গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘নদীর ওপারে আমার বেশ কয়েক বিঘা জমি রয়েছে। প্রতিদিনই নদী পাড়ি দিয়ে ওপারে যেতে হয়। বর্ষাকালে গামছা ও হাফপ্যান্ট পরে সাঁতরে নদী পার হতে গিয়ে দুর্ভোগের শেষ থাকে না।’
এ বিষয়ে লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার তরিকুল ইসলাম বলেন, সেতুর নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে চলে যান। তবে কয়েকদিন হলো ঠিকাদার মালামাল আনতে শুরু করেছেন।ঠিকাদার ফুল মিয়া জানান, খুব শিগগির সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে। ঈশ্বরদী ও পাবনা এলজিইডি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী এনামুল কবির বলেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ রেখেছিলেন। তারা কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। আশা করছি, খুব শিগগির তারা আবার কাজ শুরু করবেন।পাবনা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান মন্ডল বলেন, কাজ দ্রুত শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুরু না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।