দুই লাখ টাকা হাদিয়া দিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে ইমামকে বিদায়
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি,শরীয়তপুরঃ
দুই লাখ টাকা হাদিয়া দিয়ে ফুল সজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে মসজিদের ইমামকে বিদায় জানিয়েছেন মুসল্লিরা। শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের পাপরাইল দিঘির পূর্বপাড় বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ক্বারী মো. নুরুল ইসলামকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেওয়া হয়।এমন রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা পেয়ে আবেগ আপ্লুত ইমাম সকলের জন্য দোয়া করেছেন। নুরুল ইসলাম ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার বাসিন্দা।
মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে মাত্র ৪০০ টাকা বেতনে এক চালা বিশিষ্ট পাপরাইল দিঘির পূর্বপাড় বায়তুল আমান জামে মসজিদে ইমামতি শুরু করেন ক্বারী মো. নুরুল ইসলাম। তার তত্ত্বাবধানে দীর্ঘ ২৮ বছরে মসজিদটি সকলের সহযোগিতায় এক তলা বিল্ডিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও সাত তলা বিশিষ্ট একটি মিনারের কাজ চলমান রয়েছে। ইমাম নুরুল ইসলামের বয়স এখন ৫০ পেরিয়েছে। জীবনের বাকি সময়টুকু তিনি তার সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে কাটাতে চান- মুসল্লিদের কাছে এমন দাবি জানালে মসজিদ কমিটি তাকে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করে। মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার সকালে তাকে ফুল সজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে বিদায় সংবর্ধনা দেন মুসল্লিরা। এ সময় তাকে হাদিয়া স্বরূপ নগদ দুই লাখ টাকা ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়। বিদায়বেলায় রাজকীয় এমন সম্মান পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে মুসল্লির জন্য দোয়া করেছেন ক্বারী মো. নুরুল ইসলাম। মুসল্লিরাও তার সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।
আব্বাস উদ্দিন নামে এক মুসল্লি বলেন, মসিজদের ইমাম সাহেব খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তার কাছেই আমি আরবি ও কোরআন পড়া শিখেছি। তাকে কখনো দূরের মানুষ মনে হয়নি। আমরা কোনো ভুল করলে তিনি ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী আমাদেরকে শুধরে দিতেন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি আমাদের গ্রামেই ছিলেন। তাকে বিদায় দিতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তার ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে তাকে বিদায় দিয়েছি আমরা।
ক্বারী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, জীবনের দীর্ঘ সময় মসজিদটিতে ইমামতি করেছি। এখানে আমার অনেক ছাত্র রয়েছেন। আমার ছাত্রসহ সকল মুসল্লি যেন ঈমানের সহিত পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারেন, এই দোয়া করি। তারা আমাকে যে রাজকীয় সম্মান দিয়েছেন, আল্লাহ তায়ালা যেন তাদেরকে এমন সম্মান দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত করেন। রাজকীয় এই বিদায়কে আমৃত্যু স্মরণ রেখে সবার জন্য দোয়া করব। আমার পরিবারের জন্যও আমি দোয়া চাই।
পাপরাইল দিঘির পূর্বপাড় বায়তুল আমান জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. সোবহান সরদার বলেন, আমরা আমাদের আত্মার আত্মীয়কে বিদায় দিচ্ছি। দিনটি আমাদের জন্য বেদনার, কেননা সবারই পরম আত্মীয়কে বিদায় দিতে কষ্ট হয়। তবুও পৃথিবীর নিয়ম, মানতেই হবে আমাদের। ক্বারী সাহেব আমাদেরকে দীর্ঘ ২৮ বছর ইসলামের শিক্ষায় আলোকিত করেছেন। তার শিক্ষা নিয়ে আমরা জীবনে চলার চেষ্টা করব। তার ও তার পরিবারের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি আমি।
ছয়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিটন বলেন, ইমাম মানে পথপ্রদর্শক। দিঘিরপাড় জামে মসজিদের ইমামকে রাজকীয়ভাবে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিরা। এই সংবর্ধনা ইমামকে সম্মানিত করেছে। এমন বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করায় মসজিদ কমিটিকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাই।